পরিদর্শক জামিরুলের গাড়িতে ফুল ছেটাচ্ছেন পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলী

দীর্ঘ ৪০ বছরের চাকরিজীবন শেষ করে অবসরে যাওয়া এক পুলিশ পরিদর্শককে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিদায় জানিয়েছে মেহেরপুর জেলা পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) দুপুরে মেহেরপুর পুলিশ লাইন্স মাঠ থেকে সুসজ্জিত গাড়িতে করে পুলিশ পরিদর্শক (সশস্ত্র) জামিরুল ইসলামকে কর্মস্থল মেহেরপুর থেকে নিজ বাড়ি কুষ্টিয়ায় পৌঁছে দিয়ে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন পুলিশ সুপার (এসপি) এসএম মুরাদ আলী।

জামিরুল ইসলাম কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার মো. আবুল হোসেনের ছেলে।  মায়ের নাম মোছাম্মৎ রুফাতন্নেছা। তার জন্ম ১৯৬২ সালে। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি মেজো। ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন জামিরুল ইসলাম। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে মেহেরপুর পুলিশ লাইন্সে যোগদান করেন। তিনি তিন সন্তানের জনক। 

গত সোমবার (১৪ জুন) পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে জামিরুল ইসলামকে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়। বিদায় অনুষ্ঠানে পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলীর সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামিরুল ইসলাম (জামি), সদর থানার ওসি শাহদারা খান, পুলিশের জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসি জুলফিকার আলী, ডিআইও-১ মো. ফারুক হোসেন প্রমুখ।

পরিদর্শক জামিরুল ইসলামকে ফুল দিয়ে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানান পুলিশ সুপার

বৃহস্পতিবার দুপুরে মেহেরপুর পুলিশ লাইন্স প্রাঙ্গণ থেকে জামিরুল ইসলামকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানানো হয়। পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলীর উপস্থিতিতে পুলিশের একটি সুসজ্জিত পিকআপে করে তাকে তার নিজ বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। এর আগে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ পুলিশ সদস্যরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ফুল ছিটিয়ে তাকে বিদায়ী অভিবাদন জানান। 

এ সময় সেখানে একদিকে আনন্দঘন পরিবেশ অন্যদিকে বিষাদের ছাঁয়া দেখা যায়। বিদায়বেলায় অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন জামিরুল ইসলাম। সাধারণত পুলিশ সুপারদের বিদায়বেলায় এমন জমকালো অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। তবে। পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলীর নির্দেশনায় জাঁকজমকভাবে পরিদর্শক জামিরুল ইসলামকে এ ধরনের বিদায় দেওয়া হয়।

জামিরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, চাকরিজীবনের শেষে হয়তো আমাকে ভ্যান কিংবা রিকশায় বা ভাড়া করা গাড়িতে বাড়িতে আসতে হতো। সেটি ছিল অন্য রকম। নিজেকে অসহায় মনে হতো। কিন্তু চাকরিজীবন শেষে বিদায়বেলায় পুলিশ সুপার স্যার আমাকে ফুলের মালা দিয়ে পুলিশ লাইন্সের সব চাইতে ভালো গাড়িতে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন। এটা আমাকে গর্বিত করেছে। ‘পুলিশ জনতা, জনতাই পুলিশ’ এ কথা প্রমাণ করে আমি আগে পুলিশ ছিলাম, এখন জনতা। তারপরও আমাকে যে সম্মান করা হয়েছে আমি আমার পরিবার এবং সমাজের কাছে মাথা উঁচু করে বলতে পারবো- আমি বাংলাদেশ পুলিশ নিয়ে গর্বিত। 

মেহেরপুরের পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, একজন পুলিশ সদস্য তার জীবনের সব দিন মানুষের সেবায় এবং মানুষের নিরাপত্তায় ব্যায় করেন। আমিও সেই পুলিশ। আমাকেও একদিন অন্যদের মত অবসরে যেতে হবে। তাই একজন চাকরিজীবী হিসেবে জামিরুলকে সম্মান করে তাকে সুসজ্জিত পুলিশের গাড়িতে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তার পরিবারের কাছে সে অনেক সম্মান পেয়েছে। একজন পুলিশ বিদায়বেলায় আত্মতৃপ্তি নিয়ে যাতে বাড়ি ফিরতে পারে আমি তারই ব্যবস্থা করেছি। এটা অন্যদের কর্মক্ষেত্রে উৎসাহ যোগাবে। শুরু এবং শেষ এ দুটোই যেন তার সারাজীবনের তৃপ্তিপূর্ণ স্মৃতি হয়ে থাকে। 

আরএআর