আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান

নিখোঁজের আটদিন পর আলোচিত ইসলামি বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান ও তার তিন সঙ্গীকে উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, আবু ত্ব-হা ও তার সঙ্গীরা নিখোঁজ হননি, তারা স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলেন। এর নেপথ্যে আবু ত্ব-হার পারিবারিক ও ব্যক্তিগত কিছু কারণ রয়েছে। যা তদন্তের স্বার্থে এখনই প্রকাশ করতে চাইছে না পুলিশ।

আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানসহ অপর তিন সঙ্গী আব্দুল মুকিত, মোহাম্মদ ফিরোজ ও গাড়িচালক আমির উদ্দিন ফয়েজকে তাদের নিজ নিজ বাড়িতে পাওয়া গেছে। তারা গত ১০ জুন বিকেলে রংপুর থেকে ঢাকায় যাওয়ার পথে গাবতলী এলাকা থেকে নিখোঁজ হন বলে অভিযোগ ছিল। এ নিয়ে আবু ত্ব-হার মা আজেদা বেগম রংপুরে কোতোয়ালি থানায় এবং তার দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিকুন্নাহার সারা ঢাকার পল্লবী থানায় পৃথক সাধারণ ডায়েরি করেন। এছাড়াও গাড়িচালক আমির উদ্দিন ফয়েজের ভাই ফয়সাল রংপুরে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।

নিখোঁজ চারজনের সন্ধানের দাবি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদে আলোচনা-সমালোচনা হয়।  দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন-সমাবেশও করা হয়। আবু ত্ব-হার স্ত্রী সাবিকুন্নাহার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে তার স্বামীর সন্ধান দাবি করেন। শুধু তাই নয়, নিখোঁজ স্বামীর সন্ধান চেয়ে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি বরাবর আবেদনও করেন সাবিকুন্নাহার।

নিখোঁজের অভিযোগ তোলার ঠিক আটদিন পর শুক্রবার (১৮ জুন) দুপুর থেকে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানা যায় আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান বাড়ি ফিরেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত হতে রংপুর নগরের সেন্ট্রাল রোডের আবু ত্ব-হার মামার বাড়ি এবং শালবন এলাকার চেয়ারম্যানের গলিতে আবু ত্ব-হার ভাড়া বাড়িতে খোঁজ নেওয়া হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে আবু ত্ব-হা আদনানসহ নিখোঁজ অন্য তিনজন বাড়ি ফিরেছেন বলে জানানো হয়। কিন্তু তখন পর্যন্ত ত্ব-হা কোন বাড়িতে আছেন তা বলেননি ত্ব-হার মা আজেদা বেগম।

জুমার নামাজের পর বেলা আড়াইটার দিকে রংপুর নগরের আবহাওয়া অফিস সংলগ্ন মাস্টারপাড়া এলাকায় আবু ত্ব-হা আদনানের প্রথম স্ত্রী আবিদা নুরের বাবার বাড়িতে যায় কোতোয়ালি থানা পুলিশ। সেখান থেকে বেলা পৌনে ৩টার দিকে আবু ত্ব-হাকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে থানা থেকে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়।

আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানকে আটকের ১৫ মিনিট পর গাড়িচালক আমির উদ্দিন ফয়েজকে তার নগরীর আশরতপুরের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। এর ঠিক কিছুক্ষণ পর আব্দুল মুকিতকে মিঠাপুকুরের জায়গীরহাট থেকে ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়। এছাড়া মোহাম্মদ ফিরোজ আলম বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার সাফিয়ান পাড়ায় তার বাড়িতে ছিলেন। সেখানকার থানা পুলিশের মাধ্যমে তাকেও বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। ফিরোজ আলমকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রংপুরে ডিবি কার্যালয়ে আনা হবে।

আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান তার সঙ্গীদের নিয়ে এতদিন গাইবান্ধার ত্রিমোহনীতে আবু ত্ব-হার পূর্ব পরিচিত বন্ধু সিয়ামের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। শুক্রবার দুপুরে গাইবান্ধা থেকে তারা নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। বিষয়টি আবু ত্ব-হার পরিবার থেকে পুলিশকে অবগত করা হয়েছে বলেও দাবি করা হচ্ছে।

কোতোয়ালি থানা পুলিশ বেলা পৌনে ৩টার সময় রংপুর নগরের আবহাওয়া অফিস সংলগ্ন মাস্টারপাড়া এলাকার আজহারুল ইসলাম মন্ডল নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে আবু ত্ব-হা আদনানের খোঁজ পায়। সেখান থেকে আবু ত্ব-হাকে পুলিশি হেফাজতে গাড়িতে করে থানায় নিয়ে আসা হয়। আজহারুল ইসলাম মন্ডল ইসলামি বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানের শ্বশুর। তিনি আবু ত্ব-হার প্রথম স্ত্রী আবিদা নুরের বাবা। শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আবু ত্ব-হা তার শ্বশুরবাড়িতে একা আসেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় খোকন ও বিপ্লব নামে দুই ব্যক্তি।
 
টানা আটদিন ধরে নিখোঁজ আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান গাইবান্ধায় ছিলেন। সেখানে তার সঙ্গে আব্দুল মুকিত, ফিরোজ আলম ও গাড়িচালক আমির উদ্দিন ফয়েজ ছিলেন। সেখানে অবস্থানকালে তারা সবাই নিজেদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের সুইচ বন্ধ করে আবু ত্ব-হার কাছে রেখে দেন। পারিবারিক ও ব্যক্তিগত সমস্যার কারণেই আবু ত্ব-হা তার সঙ্গীদের সঙ্গে আত্মগোপনে ছিলেন। এমনটাই দাবি করেছেন রংপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন।

তিনি জানান, আট দিন নিখোঁজ থাকার পর ইসলামি বক্তা আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনানের খোঁজ পাওয়া গেছে। তাকে গুম করা হয়নি, নিজে স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলেন। তারা গাইবান্ধার ত্রিমোহনীতে সিয়াম নামে এক বন্ধুর বাসায় ছিলেন। পরে সেখান থেকে তারা নিজ নিজ বাসায় চলে আসেন।

আবু মারুফ হোসেন বলেন, গাইবান্ধায় বন্ধুর বাড়িতে অবস্থানকালে ত্ব-হার ইচ্ছাতেই সবাই তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ রাখেন। ত্ব-হার পরামর্শে এভাবে আত্মগোপনে থাকার সিদ্ধান্ত নেন তারা। মূলত পারিবারিক ও ব্যক্তিগত বিভিন্ন সমস্যার কারণে ত্ব-হা আত্মগোপনে থাকতে চান বলে সঙ্গীদের জানান এবং তাদের সবাইকে মোবাইল ফোন বন্ধ রাখতে বলেন। ত্ব-হার কথায় রাজি হয়ে বাকিরাও স্বেচ্ছায় এভাবে আত্মগোপনে থাকেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে থাকার দাবি করলেও এই ঘটনা রাষ্ট্র কিংবা সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলানোর কোনো ষড়যন্ত্র কি-না তাও খতিয়ে দেখবে পুলিশ। এখন আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা করা এবং আদালতে উপস্থাপন করা হবে। আদালতে তারা যে জবানবন্দি দেবেন, পরে সেই অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ত্ব-হার উদ্ধৃতি দিয়ে উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন বলেন,আবু ত্ব-হা আমাদেরকে তার ব্যক্তিগত কিছু সমস্যার কথা জানিয়েছেন। আমরা তার কথাগুলো যাচাই-বাছাই করছি। ব্যক্তিগত কিছু কারণে তারা আত্মগোপনে ছিলেন। তবে সেই ব্যক্তিগত কারণের বিষয়ে কিছু জানাতে রাজি হননি এই পুলিশ কর্মকর্তা।

এদিকে আবু ত্ব-হা ও তার সঙ্গীদের পরিবারের কেউ এনিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানের পরিবারে মা-বোন, স্ত্রী এবং গাড়িচালক আমির উদ্দিন ফয়েজের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা মিডিয়ার পরিচয় জানতে পেরে আত্মগোপনে থাকার প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যান।

তবে পুলিশের একটি সূত্র দাবি করেছে, গুম বা নিখোঁজ হওয়ার ‘নাটক’ সাজিয়েছিলেন আবু ত্ব-হা আদনান। মূলত পারিবারিক বিবাদের সূত্র ধরে আবু ত্ব-হা তার সঙ্গীয় কয়েকজনকে নিয়ে আত্মগোপনে ছিলেন।

আরএআর