ঝাড়ফুঁক নয়, সাপুড়েরও ভরসা ভ্যাকসিনে
সম্প্রতি ঠাকুরগাঁও বাসস্ট্যান্ড এলাকায় তিনজন সাপুড়ে বসেছিলেন খেলা দেখাতে। কাঠের বাক্স থেকে বের হচ্ছিল গোখরা, কেউটে, চন্দ্রবোড়া, দাড়াশ আর অজগর। চারপাশে ভিড় জমলেও দৃশ্যটা যেন একসময়ের তুলনায় ম্লান। এখন আর আগের মতো দর্শকের ভিড় নেই, গাছগাছালির ওষুধেরও কদর নেই।
দিনাজপুর পৌর শহরের শেখপুরা মহল্লার বাসিন্দা মো. আইনুদ্দিনের (৭৫) জীবন কেটেছে সাপের খেলা দেখিয়েই। তিনি বলেন, ৪০ বছর হলো সাপের খেলা দেখাচ্ছি। সাপ বিক্রি করে আর এই খেলার আয়ে দুই ছেলে দুই মেয়েকে মানুষ করেছি। আগে ভিড় লেগে থাকত, এখন আর কেউ আসে না।
বিজ্ঞাপন
আইনুদ্দিন জানান, খেলার জন্য তারা সাপ কেনেন ঢাকার সাভারের বাজার থেকে। বেশির ভাগ সাপ ভারত থেকে আসে। একেকটি সাপ কিনতে লাগে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। খেলার সময় কখনো কখনো সাপ দংশনও করে বসে। আইনুদ্দিন বলেন, তিন-চারবার সাপে কামড়েছে। প্রতিবার মেডিকেলে গিয়ে ভ্যাকসিন নিয়ে সুস্থ হয়েছি।
আইনুদ্দিনের পাশে বসেছিলেন তার ওস্তাদ নুর ইসলাম। তিনি বলেন, আগে গাছগাছালির ওষুধ বিক্রি করে সংসার চলত। এখন আর কেউ কেনে না। দু-তিন মাস পর খেলা ছেড়ে ফলের দোকান দেব ভাবছি।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন
দলের আরেক সদস্য হবিবুর রহমানও আছেন এই পেশায় চার দশক ধরে। তার কথায়, খেলা দিয়ে আর সংসার চলে না। নতুন পথ খুঁজতেই হবে।
এই সাপুড়েরা স্বীকার করেন, বিষদাঁত ভেঙে ফেলার পরও সাপে দংশনের ঝুঁকি থাকে। কারণ, প্রতি মাসেই নতুন বিষদাঁত গজায়। ফলে খেলা চলাকালীন তাদের প্রায়ই কামড় খেতে হয়। নিজেদের তৈরি গাছগাছালির ওষুধে কোনো ফল মেলেনি।
আইনুদ্দিন সরল স্বীকারোক্তি দেন, কাউকে সাপে কামড়ালে তার প্রথম কাজ হওয়া উচিত মেডিকেলে গিয়ে ভ্যাকসিন নেওয়া। ওঝা বা ঝাড়ফুঁকে সময় নষ্ট করলে রোগীর প্রাণ ঝুঁকিতে পড়ে।
ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, যারা সাপ নিয়ে খেলা দেখান, ঝুঁকি নেন প্রতিদিন, তারাও শেষ পর্যন্ত ছুটে যান হাসপাতালে। তাদের এই অভিজ্ঞতা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় সাপে কামড়ালে ভরসা একটাই, ভ্যাকসিন। ওঝা নয়, চিকিৎসাই পারে জীবন বাঁচাতে।
রেদওয়ান মিলন/এএমকে