ভূরুঙ্গামারী উপজেলার পাথরডুবি ইউনিয়নের বাঁশজানি সীমান্তে দুদেশের একটি মসজিদ

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার পাথরডুবি ইউনিয়নের বাঁশজানি সীমান্তে দুদেশের একটি মসজিদ। প্রায় ২০০ বছর ধরে এই মসজিদে নামাজ আদায় করছেন দুই বাংলার মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ-ভারত সীমানার আন্তর্জাতিক মেইন পিলার ৯৭৮-এর সাব-পিলার ৯ এসের পাশে মসজিদের অবস্থান। উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার সাহেবগঞ্জ থানার ঝাকুয়াটারী গ্রাম, দক্ষিণে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার পাথরডুবি ইউনিয়নের বাঁশজানি গ্রাম।

স্থানীয়রা জানায়, দুই সীমান্তের শূন্যরেখায় বাংলাদেশের ভূখণ্ডে নির্মিত মসজিদের নাম ‘ঝাকুয়াটারী সীমান্ত জামে মসজিদ’। মসজিদের বয়স প্রায় দুইশ বছর। মুসলিম সম্প্রীতির প্রতীক হয়ে ব্রিটিশ আমল থেকে মসজিদটি দাঁড়িয়ে আছে। দেশ ভাগের আগে আত্মীয়স্বজন নিয়ে এখানকার সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল।

মসজিদের ইমাম বাঁশজানি গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিক

১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ বিভক্ত হলে গ্রামের উত্তর অংশ ভারতের ও দক্ষিণ অংশ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থেকে যায়। ভারতীয় অংশের নাম হয় ঝাকুয়াটারী বাংলাদেশের অংশের নামকরণ হয় বাঁশজানি গ্রাম।

পরবর্তীতে ভারত কাঁটাতারের বেড়া দিলে ভারতের অংশ বেড়ার বাইরে পড়ে যায়। গ্রামটি আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার দিয়ে দুদেশে বিভক্ত হলেও ভাগ হয়নি তাদের সামাজিকবন্ধন। প্রতিবেশীর মতই তাদের বসবাস। ভিন্ন সংস্কৃতি ভিন্ন দেশ হওয়া সত্ত্বেও একই সমাজের বাসিন্দা, একই মসজিদের মুসল্লি তারা।

মসজিদের মুয়াজ্জিন বাঁশজানি গ্রামের বাসিন্দা নজরুল মিয়া বলেন, আজানের ধ্বনিতে দুই বাংলার মুসল্লিরা ছুটে আসি মসজিদে। একসঙ্গে নামাজ আদায় করি। একে-অপরের ভালোবাসায় মুগ্ধ হই। দুই বাংলার সীমান্তবাসী দুঃখ, বেদনা ও সুখের কথা আদান-প্রদান করি। একই সমাজভুক্ত হওয়ায় একে-অপরের বিপদে-আপদে ছুটে যাই।

বাঁশজানি গ্রামের মাহবুবুর বলেন, ঐতিহ্যবাহী সীমান্ত মসজিদটি দেখতে বাংলাদেশ-ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা আসেন। তারাও মসজিদে নামাজ পড়েন।

মুসলিম সম্প্রীতির প্রতীক হয়ে ব্রিটিশ আমল থেকে দাঁড়িয়ে আছে মসজিদটি 

ভারতের ঝাকুয়াটারী গ্রাম থেকে আসা মুসল্লি আজগর আলী বলেন, সীমান্ত মসজিদটি দুইশ বছরের পুরোনো হলেও অবকাঠামোগত উন্নতি হয়নি। সীমান্তে অবকাঠামো নির্মাণে আন্তর্জাতিক আইনে বিধিনিষেধ থাকায় মসজিদের অবকাঠামো নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না। দুদেশের মানুষের আর্থিক সহায়তায় মসজিদের অবকাঠামো নির্মাণ ও মেরামত করা হয়।

মসজিদের ইমাম বাঁশজানি গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, শুক্রবার জুমার নামাজে দুদেশ থেকে আসা মুসল্লিদের উপস্থিতিতে প্রাণবন্ত হয় মসজিদটি। বাংলাদেশ-ভারতের মুসল্লিরা নামাজ শেষে তবারক বিতরণ করেন। 

মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশের কফির রহমান বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষরা এই সমাজে ছিলেন, আমরাও আছি। দুদেশ ভাগ হলেও আমাদের সমাজ ও মসজিদ ভাগ হয়নি। দুদেশের আইনি জটিলতা কাটিয়ে মসজিদের স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণের দাবি জানাই।

ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি দুদেশের সেতুবন্ধন হয়ে আছে। আমরা চিন্তা করছি দশর্নাথীমূলক করা যায় কিনা। সরকারের নজরে আনারও চেষ্টা করছি। ব্রিটিশরা চলে গেছে ১৯৪৭ সালে। সেই থেকে মসজিদে নামাজ আদায় করছেন দুদেশের মুসল্লিরা। এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটেনি। আইনিভাবে দুদেশের অনুমতি সাপেক্ষে যদি মসজিদের উন্নয়নমূলক কাজ হয় তাহলে বাইরে থেকে দশর্নাথীরা এসে দেখবে; দুদেশের মানুষের একসঙ্গে নামাজ আদায়ের দৃশ্য দেখবে সবাই।

নূরুনবী চৌধুরী খোকন, ভূরুঙ্গামারী উপজেলা চেয়ারম্যান

কুড়িগ্রাম ২২ বিজিবির অধিনায়ক মোহাম্মদ জামাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুদেশের সীমান্তে ঐতিহ্যবাহী একটি মসজিদ রয়েছে। এখন পর্যন্ত বিশৃঙ্খলা ঘটেনি। মসজিদের অতীত ইতিহাস দেখে বোঝা যায়, দুদেশের মুসল্লিদের বাধা দেয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি দুদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। এজন্য একসঙ্গে নামাজ আদায় করেন দুদেশের মুসল্লিরা।

এএম