একটি দুর্ঘটনা শুধু একজন মানুষকেই নয়, গোটা পরিবারকেও নিঃস্ব করে দিতে পারে। এ কথার বাস্তব উদাহরণ হয়ে উঠেছেন মো. পোকড়া (৫০) ও তার পরিবার। বগুড়ার ধুনট উপজেলার নিমগাছী ইউনিয়নের বালুয়াগ্রামের বাসিন্দা পোকড়া এক সময় গরুর ব্যবসা করে পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনার পর আজ তিনি পঙ্গু হয়ে শয্যাশায়ী। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে তার ছোট্ট পরিবারটি এখন নিদারুণ কষ্টে দিন পার করছেন।

গত বছরের আগস্ট মাসে হাটে গরু বিক্রি করে বাড়ি ফেরার পথে তার গরুবাহী ভটভটির সঙ্গে একটি সিএনজি অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে পোকড়ার বাম পা গুরুতরভাবে ভেঙে যায়। স্থানীয় একটি ক্লিনিকে প্রায় ৭০ হাজার টাকা খরচ করে অস্ত্রোপচার করানো হলেও তা ব্যর্থ হয়। এরপর পায়ে পচন ধরে যায়। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে কোনোভাবে বাড়ি ফিরলেও আর্থিক অনটনের কারণে চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি।

পোকড়ার স্ত্রী মোছা. শাহেরা খাতুন জানান, স্বামী শয্যাশায়ী হয়ে পড়ায় তিনিই সংসার চালানোর চেষ্টা করছেন। সামান্য কাজ করে সন্তানদের পড়াশোনা ও সংসারের খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ঋণ করে ওষুধ কিনতে হচ্ছে, সন্তানদের পড়াশোনাও প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।

পোকড়ার এক ছেলে (বয়স ৪ বছর) ও এক মেয়ে রয়েছে। মেয়ে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সংসারের টানাপোড়েনে তাদের পড়াশোনা চরম ঝুঁকিতে পড়ে গেছে।

নিজের দুর্দশার কথা বলতে গিয়ে পোকড়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, একসময় গরুর ব্যবসা করে সংসার চালাতাম। দুর্ঘটনার পর সব কিছু শেষ হয়ে গেছে। এখন আমি অচল হয়ে পড়ে আছি। পরিবারের দিকে তাকাতেও লজ্জা লাগে। যদি সমাজের কিছু মানুষ সাহায্যের হাত বাড়ান, তাহলে হয়তো আবার বাঁচার স্বপ্ন দেখতে পারি।

স্থানীয় বাসিন্দা আমিনুর ইসলাম বলেন, পোকড়ার অবস্থা এখন খুব খারাপ। তার পরিবার চরম কষ্টে আছে। সমাজের বিত্তবানরা সহায়তা না করলে তাদের বেঁচে থাকাটাই কঠিন হয়ে পড়বে।

নিমগাছী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সনিতা মিশুর সঙ্গে যোগাযোগের জন্য একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে বগুড়া জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আতাউর রহমান জানান, আমরা পোকড়াকে প্রতিবন্ধী ভাতা এবং একটি হুইলচেয়ারের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এছাড়াও নিয়মিতভাবে তার পরিবারের খোঁজ নেওয়া হবে।

তবে এই সামান্য সহায়তায় পোকড়ার পরিবারের দুঃখ-দুর্দশা ঘোচানো সম্ভব হচ্ছে না। চিকিৎসার খরচ মেটানো যাচ্ছে না, সন্তানদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

এলাকাবাসীর দাবি, সমাজের দানশীল ও মানবিক মানুষরা যদি সহায়তার হাত বাড়ান, তাহলে পোকড়ার পরিবারটি আবারও স্বপ্ন দেখতে পারে, নতুন করে বাঁচার পথ খুঁজে পেতে পারে।

আব্দুল মোমিন/এআরবি