বাবা-মাসহ অভিযুক্তকে নিয়ে থানায় হাজির কিশোরী
সিরাজগঞ্জে যৌন নিপীড়নের শিকার এক কিশোরী তার বাবা-মায়ের সহযোগিতায় অভিযুক্তকে নিয়ে থানায় হাজির হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (৮ অক্টোবর) দুপুর দেড়টার দিকে সদর থানা প্রাঙ্গণে এ ঘটনা ঘটে।
যৌন নিপীড়নের শিকার ওই কিশোরীর বয়স ১৩ বছর। সে মানসিক প্রতিবন্ধী। তাদের বাড়ি সদর উপজেলার শিয়ালকোল ইউনিয়নের চন্ডিদাঁসগাতী গ্রামে। ওই কিশোরীর বাবা পেশায় দিনমজুর। তার ৪ মেয়ে ও ১ ছেলে রয়েছে। মেয়েটি সবার বড়। পরিবারের সদস্যরা জানান, পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া অবস্থাতেই সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।
বিজ্ঞাপন
ঘটনাটি অনেক দিন আগের। একই গ্রামের ৫০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি টাকার প্রলোভনের ওই কিশোরীকে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। এতে সে গর্ভবতী হয়ে পড়ে। বিষয়টি জানাজানি হলে গত মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) রাতে স্থানীয়ভাবে সালিস বসে। সেখানে দেড় লাখ টাকার বিনিময়ে অভিযুক্তকে ওই কিশোরীর সাথে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই সালিসে শিয়ালকোল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য মনজুরুল আলম, এলাকার মুরুব্বি হাজী মোজাম্মেলসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে শিয়ালকোল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য মনজুরুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, যৌন নিপীড়নের শিকার ওই কিশোরী মানসিক প্রতিবন্ধী। ওই বৃদ্ধের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিল। জানতে পেরেছি, মেয়েটি গর্ভবতী। আমরা এলাকার সর্বস্তরের মানুষজন বসেছিলাম। তাদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আমরা দেইনি। তবে বলছিলাম, আদালত থেকে যদি দেড় লাখ টাকা দেনমোহরের অনুমতি আনতে পারো তাহলে কাজি ডেকে এনে বিয়ে দেব।
অভিযুক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে তিনি বলেন, তার বয়স অনেক। অতীতে এ রকম তার নারী ঘটিত কোনো ঘটনা আমরা কখনোই শুনিনি। তবে ওই কিশোরীর সঙ্গে যে সম্পর্ক আছে, সেটা আমাদের এলাকার সবাই অবগত ছিল। এটা আমরা সবাই বিশ্বাস করেই নিয়েছি।
অভিযুক্ত ব্যক্তির সংসারে তিনটি মেয়ে রয়েছে। সবগুলো মেয়েই বিবাহিত। অভিযুক্তের স্ত্রীও তার স্বামীর সঙ্গে ওই কিশোরীর সম্পর্কের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমার স্বামীর ওই মেয়েটির সঙ্গে তিন থেকে চার বছর ধরে সম্পর্ক থাকায় আমাদের সংসারে নিয়মিত ঝগড়া হতো। এমনকি কয়েকদিন আগেও দুর্গাপূজার মেলায় ওই মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে দেখেছি। ওই মেয়েকে টাকা দিলেই নাকি ঘুরতে যায়। আমার স্বামী প্রায়ই বলতো, ওই মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক করতে চাই।
ওই কিশোরীতো এখন গর্ভবতী, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুরুষ মানুষ একসঙ্গে থেকেছে, এসব হতেও পারে। তবে আমি কখনও দেখিনি। আমাদের বাড়িতেও কখনও আনেনি। তবে ওই মেয়েটি অনেকের সঙ্গে টাকার বিনিময়ে ঘুরতো। মেয়েটির পেটের বাচ্চা আমার স্বামীর নাও হতে পারে। তবে স্বীকার করি আমার স্বামীর সঙ্গে ওই মেয়ের সম্পর্ক ছিল।
এদিকে, বুধবার (৮ অক্টোবর) সকালে উভয়পক্ষ সিরাজগঞ্জ আদালত চত্বরে বিয়ে সম্পন্ন করতে গেলে কিশোরীর অপ্রাপ্তবয়স্কতার কারণে কোনো আইনজীবী তাদের বিয়ের কাজে রাজি হননি। পরে দুপুরে ওই কিশোরী ও তার বাবা-মা অভিযুক্তকে ধরে সদর থানায় নিয়ে যায় এবং পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
যৌন নিপীড়নের শিকার ওই কিশোরীর মা বলেন, অভিযুক্ত আমার মেয়েকে টাকার লোভ দেখিয়ে নিয়ে যেত। খারাপ কাজ করে মেয়ের পেটে বাচ্চা তুলে দিছে। জানাজানি হওয়ার পরে আমরা গ্রামের লোকের কাছে বিচার দিয়েছিলাম। আজ থানায় নিয়ে এসেছি।
এ ঘটনায় সিরাজগঞ্জ সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোখলেছুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা অভিযুক্তকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছি। প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
নাজমুল হাসান/এমএএস