শীতের আগেই মুলাসহ বিভিন্ন শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছে কুমিল্লার গোমতী নদীর চরাঞ্চলের কৃষকেরা। শীতকালীন সবজি হিসেবে পরিচিত হলেও গোমতীর চরের জমিগুলোতে মুলার চাষ হচ্ছে শীতের আগেই। আগাম এসব মুলায় দাম ভালো পেলেও ফলনে হতাশ গোমতীর চরের কৃষকরা। 

সোমবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে সরেজমিনে গোমতী নদীর তীরের কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ভান্তি এলাকায় কৃষকদের ব্যস্ততা দেখা গেছে চোখে পড়ার মতো। একেকটি জমিতে ৩০-৪০জন শ্রমিক মুলা তুলে বাজারজাত করার কাজ করছেন। 

গোমতী নদীর চরের বুড়িচং উপজেলার ভান্তি, আমতলী, কামারখাড়া, বালিখাড়া, কাহেতরাসহ কয়েকটি এলাকার জমিতে প্রচুর পরিমাণে মুলার চাষ করা হয়েছে। মুলার পাশাপাশি লাউশাক, লালশাক ও কিছু জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করা হয়েছে। আগাম মুলায় ভালো দাম পেলেও ফলনে খুশি নন কৃষকেরা। 

সরেজমিনে দেখা গেছে গোমতীর চরের জমিগুলোতে কৃষকদের এখন ব্যস্ততা প্রচুর। কেউ জমি থেকে মুলা তুলছেন। কেউ ডোবার পানিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দলবদ্ধভাবে সেগুলো পরিষ্কার করছেন। কেউ কেউ আইলে তুলে সাজাচ্ছেন। কেউ তুলছেন গাড়িতে। এসব মুলা কুমিল্লার নিমসার বাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালীর বসুরহাটসহ দেশের বিভিন্ন বড় পাইকারি বাজারে বিক্রি করা হয়।

তবে গোমতীর চরের জমিগুলোর উর্বরতা কমে গেছে। যার ফলে মুলার ফলন নিয়ে হতাশার কথা জানিয়েছেন কৃষকরা। মুলাতে বিভিন্ন রকমের রোগের প্রাদুর্ভাবের ফলে আগের তুলনায় ফলন অনেক কমে গেছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। 

ভান্তি এলাকার কৃষক মিজানুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, মুলার দাম এখন ভালো। ৪০-৫০টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে। তবে আগের চেয়ে ফলন অনেক কমে গেছে। কেটিএস প্রজাতির এসব মুলা আগে কানিতে ১০০ মণের মতো ফলন হতো। কিন্তু এখন ৫০-৬০ মণের বেশি হয় না। পাইকারদের কাছে বিক্রি জমিচুক্তি বিক্রি করে দিয়েছি। 

আফজল হোসেন নামের এক কৃষক ঢাকা পোস্টকে বলেন, গেল বছরের বন্যার পর মনে হচ্ছে মাটির উর্বরতা কমে গেছে। মুলাতে ফাটা রোগ দিয়েছে। এছাড়া গুঁড়া কৃমির আক্রমণে মুলা যেমন মোটাতাজা বা সরস হওয়ার কথা ছিল, তেমনটা হচ্ছে না। অন্যান্য বছরের তুলনায় ফলন খুবই কম হচ্ছে। 

মকবুল হোসেন নামের এক পাইকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, এক কানি বা ১২০ শতাংশ জমির মুলা কিনেছি দেড় লাখ টাকা দিয়ে। প্রতিদিন ৩৬ জন শ্রমিক কাজ করছেন। কারও দৈনিক বেতন ৮০০ কারও আবার ৯০০। এসব শ্রমিকদের খাবারসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে ২ লাখ টাকার মতো খরচ। মুলার ফলন অন্যান্য বছরের তুলনায় কম। তাই খরচের টাকা উঠবে কিনা সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। লাভ তো পরের বিষয়। 

আলী হোসেন নামের এক পাইকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, এক কানি (১২০ শতক) জমিতে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হবে। দাম ভালো আছে। কিন্তু ওজনে আসে না। মুলার ফলন অনেক কম। দুর্বল ওজনের মুলা হয়েছে এবার।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গোমতীর চরে এবার ১০ হেক্টর জমিতে আগাম মুলার চাষ হয়েছে। পুরো বুড়িচং উপজেলায় আবাদ হয়েছে ৬০ হেক্টর জমিতে। 

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, মাটির উর্বরতা নয়, অসময়ে এবার প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে ফলন কিছুটা কমে গেছে। তবে আগের চাইতে মুলাসহ সব সবজি ভালো দামে বিক্রি করা হচ্ছে। 

বুড়িচং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা. আফরিণা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, গেল বছরের বন্যার পরও চরের জমিগুলোর ফলন ভালো ছিল। এবার আগাম মুলার আবাদের শুরু থেকেই অসময়ে বৃষ্টি হওয়ায় ফলন কিছুটা কম হয়েছে। এছাড়া রোগবালাই ও কৃমির আক্রমণ মূলত বৃষ্টির কারণেই হচ্ছে। রবি ফসল উৎপাদনের সময় আবহাওয়া ঠিক থাকলে আগের মতোই ভালো ফলন হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক মিজানুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, অসময়ে বৃষ্টির কারণে ফসলে রোগব্যাধির আক্রমণ হয়। এখন কিছুটা ফলন কমলেও সামনে রবিশস্যের ফলন ভালো হবে। বৃষ্টির ফলে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। সামনে রবিশস্য এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় ভালো হবে ইনশাআল্লাহ। আমাদের কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা আছে। 

আরকে