অরক্ষিত হয়ে পড়েছে সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাংরোডে অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের অফিস। সরকারি এই অফিসটির অভ্যন্তরে কর্মচারীদের জন্য নির্মিত আবাসিক কলোনিতে বহিরাগত ভাড়াটিয়াদের বসবাসে সৃষ্টি হয়েছে নিরাপত্তাহীনতা। এমনকি সেখানে খুনের ঘটনাও ঘটেছে সম্প্রতি।

গত ১৩ আগস্ট দিবাগত রাতে ওই কলোনির ভিটিকান্দি সড়ক উপবিভাগের উচ্চমান সহকারী তাহের সরকারের বরাদ্দপ্রাপ্ত বাসায় খুন হন সাবিনা আক্তার লাকি (৩৬) নামে এক নারী। তিনি সওজ বিভাগের কর্মচারী না হয়েও ওই বাসায় পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতেন। পরকীয়ার জেরে নাজিম ওরফে নীরব (৪২) তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে পালিয়ে যান। পরে ১৬ আগস্ট দিবাগত রাতে ঝালকাঠির নলছিটি থানার তিমিরকাঠি এলাকা থেকে র‌্যাব-১১ তাকে গ্রেপ্তার করে।

এই হত্যাকাণ্ডের পরই প্রকাশ্যে আসে সরকারি বাসায় বহিরাগতদের দীর্ঘদিনের অবৈধ দখল ও ভাড়া বাণিজ্যের চিত্র। অফিসের একাধিক কর্মচারীর অভিযোগ—

ওই ভাড়াটিয়াদের বেশিরভাগই মাদক ব্যবসা, চুরি ও ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। ফলে অফিসের ভেতরে কোটি টাকার মালামাল, যানবাহন ও নির্মাণ সরঞ্জাম এখন ঝুঁকির মুখে।

 

সওজ সূত্র জানায়, সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাংরোডে অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ সওজ অফিসের জন্য ৩৪টি আবাসিক ঘর নির্মাণ করা হয়েছিল কর্মচারীদের জন্য। কিন্তু বর্তমানে এসব ঘর দখল করে নিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী ও বহিরাগত ভাড়াটিয়ারা। কেউ কেউ পুরো বাসা আবার বিক্রি করে দিয়েছেন।

সর্বশেষ ২৮-বি নম্বর বাসাটি শ্রমিকলীগের এক প্রভাবশালী কর্মকর্তা ও উচ্চমান সহকারী জামায়াত উল্লাহ ২ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও তিনি বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি শুধু বাসাটি হস্তান্তর করেছি।’

অভিযোগ রয়েছে, আবাসিক কমিটির সভাপতি ড্রাইভার মো. মফিজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক জামায়াত উল্লাহ গত ১৫ বছর ধরে শ্রমিকলীগের প্রভাব খাটিয়ে বাসাগুলো নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। তারা বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিলসহ ভাড়ার টাকা নিজেরা তুলে নিচ্ছেন।

এদিকে অবসরপ্রাপ্ত অনেক কর্মচারী, যেমন—হেলপার সাজু মিয়া (৪১-বি), আমির হোসেন (৪৬-বি), ড্রাইভার আব্দুল আলিম (৩৫-বি), পিয়ন মুন্সি আলাউদ্দিন (৩১-বি), ইলেকট্রিশিয়ান গোলাপ মিয়া (৫০-বি), হেলপার আবুল কালাম আজাদ (২৬-বি), জসিম উদ্দিন (২৫-বি) ও মমতাজ বেগম (৫৪ ও ৫৫-বি)—এখনো সরকারি বাসাগুলো দখল করে রেখেছেন। এতে নতুন কর্মচারীরা বাসা বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

আরও অভিযোগ রয়েছে, অফিসের ভেতরে ৩৯-বি নম্বর একটি বাসা হোটেলের রান্নাঘর হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। ড্রাইভার শহীদ ও নূরুল ইসলামসহ কয়েকজন অবৈধভাবে চারটি বাসায় বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছেন, যার বিল দিচ্ছে সরকার।

তবে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রহিম ফোন কেটে দেন।

উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আহসান উল্যাহ মজুমদার বলেন, ‘বহিরাগতদের বসবাসের বিষয়টি আগে জানা ছিল না। হত্যাকাণ্ডের পর বিষয়টি সামনে এসেছে। আমরা শিগগিরই অবৈধ ভাড়াটিয়াদের উচ্ছেদ করব।’

তবে যেসব কর্মচারী বাসা ভাড়া দিয়েছেন বা বিক্রি করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না—সে বিষয়ে তিনি কিছুই জানাননি।

মেহেদী হাসান সৈকত/এএমকে