বছর দুয়েক আগেও বর্ষা মৌসুমে আমাদের নদী পার হতে খুব কষ্ট হতো। প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা বছরের অর্ধেক সময় পানিতে তলিয়ে থাকত। ফসল আনতে-নিতে নৌকা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। এখন সেখানে সরকার একটি সুন্দর সেতু তৈরি করেছে। আমরা খুব খুশি।

এভাবেই খুশির কথা জানালেন রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের শেষ সীমান্ত ৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রত্যন্ত দুর্গম চরাঞ্চল মজলিশপুর ও চরমহিদাপুর গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা।

জানা গেছে, বছরের প্রায় ছয় মাস পানিতে ডুবে থাকত চরমজলিশপুর ও চরমহিদাপুর গ্রাম দুটি। এখানকার বেশিরভাগ মানুষ কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল হলেও অনেকে বিভিন্ন পেশার সঙ্গেও জড়িত। কেউ পদ্মা নদীতে মাছ ধরে জীবিকা চালান। শহরের সঙ্গে তেমন ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই এই গ্রামের। রাস্তা-ঘাটের অবস্থা ছিল খুবই খারাপ। কৃষিপণ্য আনা-নেওয়ার একমাত্র মাধ্যম ছিল ঘোড়ার গাড়ি। উপজেলা শহর থেকে প্রায় ৫-৭ কিলোমিটার কাঁচা ও সংকীর্ণ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হতো এলাকার প্রায় ৮-১০ হাজার মানুষকে।

শুকনা মৌসুমে কিছুটা ভ্যান-রিকশা চললেও বর্ষাকালে ঘোড়ার গাড়ি চলাচলও হয়ে পড়ত প্রায় অসম্ভব। শহরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র রাস্তাটির একটি অংশ প্রায় আধা কিলোমিটার নিচু হওয়ায় সেখানে বর্ষায় পানি জমে থাকত। ফলে তখন নৌকাই ছিল যাতায়াতের একমাত্র ভরসা। তবে এবার ব্রিজ নির্মাণ হওয়ায় চরবাসীর দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চরমজলিশপুর ও চরমহিদাপুর গ্রামে প্রবেশের পথে আধা কিলোমিটার দীর্ঘ একটি চওড়া সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। আগে এই জায়গা দিয়ে যাতায়াতে নৌকা ব্যবহার করতে হতো। কোমলমতি শিশুদেরও ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পারাপার হতে হতো। ভরা বর্ষায় সেখানে স্রোতও থাকত প্রবল। এখন সেতু থাকায় আর এসব দুর্ভোগ নেই। মজলিশপুর চরে ৩১ নম্বর মজলিশপুর জয়নাল মৃধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে, যেখানে প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী পড়ে। তাদের মধ্যে শতাধিক শিক্ষার্থী আগে ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় যাতায়াত করত। বর্ষায় প্রবল স্রোতের কারণে কখনো কখনো দুর্ঘটনার আশঙ্কাও থাকত। এখন আর এমন ভোগান্তি নেই, শিশুরা নিরাপদে স্কুলে যেতে পারছে।

এ বিষয়ে স্থানীয় চর দৌলতদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, মজলিশপুর চরের এপার-ওপারে প্রায় ৮-৯ শতাধিক পরিবারের বসবাস। নদীর দুই পাড় মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার মানুষ, বিশেষ করে স্কুলের কোমলমতি শিশুদের ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে হতো।

তিনি আরও বলেন, এই চরাঞ্চল ফসল উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। মৌসুমি সব ধরনের ফসল এখানে ভালোই উৎপন্ন হয়। তবে যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না থাকায় কৃষকরা তাদের ফসলের ন্যায্য দাম পেতেন না। নৌকায় ফসল আনা-নেওয়ায় অনেক ভোগান্তি হতো। তাই হাফ কিলোমিটার সেতুটি নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি ছিল। স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর সরকার অবশেষে সেতুটি নির্মাণ করে। এখন মানুষ কোনো রকম ভোগান্তি ছাড়াই সহজে চলাচল করতে পারছে।

উজানচর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শেখ রাসেল আহম্মেদ জানান, এ অঞ্চলের মানুষকে নদীর সঙ্গে লড়েই চলতে হয়। মজলিশপুর চরে যাওয়ার আগে কোনো রাস্তা ছিল না। ৩-৪ বছর আগে চরবাসীর চলাচলের জন্য একটি মাটির রাস্তা নির্মাণ করা হয়। তবে মজলিশপুর ও চরমহিদাপুর চরের মধ্যে থাকা হাফ কিলোমিটার রাস্তা বর্ষাকালে ৮-১০ মাস পানির নিচে থাকত। তখন একমাত্র ভরসা ছিল নৌকা। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বরাদ্দ চেয়ে অবশেষে সেখানে অনেক টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণ করা হয়। এখন চরাঞ্চলের মানুষ রিকশা, ভ্যান, অটো এমনকি বড় বড় যানবাহনেও কৃষিপণ্য সহজেই আনা-নেওয়া করতে পারছেন। সেতুটি নির্মাণ হওয়ায় চরবাসীর মুখে এখন স্বস্তির হাসি।

মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/এআরবি