স্বাক্ষর জালিয়াতির ঘটনায় র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে জেলখাটা আসামির যোগদানে আপত্তি জানানোর ঘটনায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্যের অভিযোগে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) হয়েছেন ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ছাইফুল ইসলাম। ওই আসামির নাম মো. ইমরান মেহেদী হাসান। তিনি ময়মনসিংহ সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সাবেক হিসাব রক্ষক।  

সোমবার (২০ অক্টোবর) এই খবর জানাজানি হওয়ার পর জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে মিশ্রপ্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে গতকাল (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সনজীদা শারমিন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ছাইফুল ইসলামকে ওএসডি করা হয়।    

সূত্র জানায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর জালিয়াতিসহ নানা অনিয়ম, দুর্নীতির ঘটনায় ২০২২ সালে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন ময়মনসিংহ সিভিল সার্জন কার্যালয়ের হিসাব রক্ষক ইমরান মেহেদী হাসান। এ ঘটনায় প্রায় ২ মাস জেলখেটে জামিনে কারামুক্ত হন তিনি। এরই মাঝে ২০২২ সালের ৭ জুলাই ইমরান মেহেদী হাসানকে মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শাস্তিমূলক বদলি করে বরখাস্থ করা হয়। এরপর চলতি বছরের ২৯ জুলাই লবিং তদবিরের মাধ্যমে ময়মনসিংহে আবারও পদায়ন ভাগিয়ে নেন ইমরান মেহেদী হাসান।                

কিন্তু প্রতিষ্ঠানের সুনাম রক্ষায় সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ছাইফুল ইসলাম তার পদায়নে আপত্তি জানিয়ে ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে তার পদায়ন প্রত্যাহারের সুপারিশ করেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে। এতে কর্তৃপক্ষ অসন্তুষ্ট হয়ে নির্দেশ অমান্যের অভিযোগসহ আরও বেশ কয়েকটি অভিযোগে তাকে ওএসডি করে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।    

তবে এসব বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন, ময়মনসিংহ কার্যালয়ের সাবেক হিসাব রক্ষক মো. ইমরান মেহেদী হাসান।  

এছাড়াও চলমান আউটসোর্সি টেন্ডার বর্ধিত করতে চাওয়া, ক্লিনিক-হাসপাতাল নবায়ন, ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসকের চেম্বার বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে মন্ত্রণালয়। এই কমিটিতে মন্ত্রণালয় প্রতিনিধি এবং ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মাঈনুদ্দিন খানসহ ৩ জনকে সদস্য করা হয়।    

তবে ডা. মাঈনুদ্দিন খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, সিভিল সার্জন ওএসডি হয়েছেন বলে শুনেছি। তবে আমি তদন্ত কমিটির সদস্য এ সংক্রান্ত কোনো চিঠি এখনো পাইনি।  

জেলার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. ফয়সল আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্যার (সিভিল সার্জন) ওএসডি হয়েছে বলে শুনেছি। কিন্তু কেন বা কী কারণে ওএসডি হয়েছেন তা আমার জানা নেই। তবে গত বছর আউট সোর্সিংয়ের টেন্ডারের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও স্যার এটা বর্ধিত করতে চেয়েছেন, সেখানে আমি নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছি। কারণ আউটসোর্সিংয়ে আরও ১৫১টি জনবল অনুমোদন হয়েছে, এটার টেন্ডার কিছুদিন পর হবে। তবে আমি কখনও জেলখাটা আসামির যোগদান নিতে সুপারিশ করিনি।  

এসব বিষয়ে ওএসডি হওয়া সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ছাইফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে টেন্ডার পাইয়ের দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, অথচ আমি যোগদানের পর এ ধরনের কোনো টেন্ডার এখনও হয়নি। তাছাড়া বর্তমানে ক্লিনিক-হাসপাতাল নবায়ন হয়েছে মাত্র ১৫টি, এতে সুবিধা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসকের চেম্বার বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগও সঠিক নয়। তবে আমার জানামতে, আমি প্রতিষ্ঠানের সুনাম রক্ষার স্বার্থে একজন জেলখাটা আসামির যোগদানে আপত্তি জানিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিবেচনার সুপারিশ করেছি, এটাই হয়তো অপরাধ।  

আমান উল্লাহ আকন্দ/এমএএস