পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিতে গেলে উল্টো শিশুটির বাবাসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ, এমন অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।

ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার (২০ অক্টোবর) বিকেলে উপজেলার ময়দানদিঘী ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামে। অভিযুক্ত আশিকুজ্জামান মানিক (৪৫) ওই গ্রামের বাসিন্দা এবং ময়দানদিঘী ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দুপুরে হরিপুর গ্রামের এক চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া ছাত্রী প্রতিবেশী মানিকের বাড়িতে তার মেয়েদের সঙ্গে টিভি দেখতে যায়। বিকেলে ফেরার সময় বাড়ির পাশের গলিতে সুযোগ বুঝে মানিক তার মুখ চেপে ধরে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করে বলে অভিযোগ রয়েছে। শিশুটি কোনোমতে পালিয়ে বাড়িতে ফিরে মাকে বিষয়টি জানায়। পরে তাকে দ্রুত বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর অবস্থার অবনতি হলে তাকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।

১২ বছরের ওই শিশুটির পরিবারের অভিযোগ, খবর পেয়ে পুলিশ এসে মানিককে ধরে নিয়ে যায়। পরে সন্ধ্যায় থানায় অভিযোগ করতে গেলে বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের লোকজন শিশুটির পরিবারের সদস্যদের হাত থেকে অভিযোগের কাগজটি নিয়ে ছিড়ে ফেলে বলেও দাবি করেন তারা। মামলার এজাহার জমা দিতে গিয়ে উল্টো আটক হন শিশুটির বাবা, ভাই ও চাচা। মঙ্গলবার তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। 

শিশুটির বড় বোন জানান, ঘটনার কিছুক্ষণ পর আমি নিজে সেনাবাহিনীকে ফোন দিয়েছিলাম। তারা থানায় অভিযোগ দিতে বলেছিল। এরপর আমরা প্রথমে বোনকে হাসপাতালে ভর্তি করি। পরে আমার বাবা, চাচা ও ভাই থানায় গেলে পুলিশ তাদেরই ধরে ফেলে। বিএনপি নেতার লোকজন থানার সামনে অভিযোগের কাগজ ছিড়ে ফেলে দিয়েছে।

শিশুটির মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার মেয়ের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে থানায় গেলে উল্টো পুলিশ আমার স্বামী, ছেলে ও দেবরকে আটক করেছে। বিএনপি নেতার লোকজন আমাদের হুমকি দিচ্ছে। আমি কি আমার মেয়ের ন্যায়বিচার পাব না?

অন্যদিকে অভিযুক্ত আশিকুজ্জামান মানিক ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেন, তাকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে। তিনি জানান, ঘটনার দিন টিভি বন্ধ করে দিয়ে ঘাস কাটতে গেলে পূর্ব শত্রুতার জেরে আসামিরা তাকে ধরে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে অমানবিকভাবে মারধর করে। এমনকি তার স্ত্রী সন্তানদের ওপরেও হামলা করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।  

মানিক আরও বলেন, এলাকায় আওয়ামী লীগের সময়ে তারা অবৈধভাবে জমি দখল করেছিল। সরকার পরিবর্তনের পর আমি স্থানীয়দের নিয়ে সেই জমি উদ্ধার করতে সহায়তা করি। এ কারণে তারা আমার ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। আমাকে পরিকল্পিতভাবে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে মারধর করেছে। আমি এখন রংপুরে চিকিৎসাধীন। আমার একটা চোখ নষ্টের পথে। আমার ওপর নির্যাতন দেখে স্থানীয়রা ৯৯৯ ফোন দেয়। পরে পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।

এ ঘটনায় বোদা থানায় দুটি পৃথক মামলা হয়েছে। একটি মামলা করেছেন আশিকুজ্জামান মানিক নিজে, যেখানে তিনি হামলার অভিযোগ এনেছেন শিশুটির পরিবার ও আত্মীয়দের বিরুদ্ধে। অপর মামলাটি করেছেন ভুক্তভোগী শিশুটির পরিবার, যেখানে মানিকের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।

বোদা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিম উদ্দিন বলেন, পূর্ব শত্রুতার জেরে মব সৃষ্টি করে মানিককে মারধর করে আধামরা করা হয়। ৯৯৯ ফোন করে স্থানীয়রা সহায়তা চাইলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। আগে মানিক মামলা করেছে। পরে শিশুটির বাবাসহ তিনজন ধর্ষণ চেষ্টার মামলা করতে এলে তাদের মামলটিও নেওয়া হয়। তারা যেহেতু আসামি তাই আমরা তাদের গ্রেপ্তার করেছি। এখানে মামলার এজাহার ছেড়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি।

মো. নুর হাসান/এমএএস