মনসুর আলী হাসপাতালে সেবার মান নিয়ে ক্ষোভ, জেরার মুখে পরিচালক
সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না স্থানীয়রা। আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকা সত্ত্বেও লোকবল না থাকায় সেগুলো ব্যবহার হচ্ছে না। এসব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয়রা হাসপাতালের পরিচালক এ টি এম নুরুজ্জামানকে জেরার মুখে ফেলেছেন।
রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে হাসপাতালে উপস্থিত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ পরিচালককে ঘিরে রেখে নানা প্রশ্নে জর্জরিত করে।
বিজ্ঞাপন
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিরাজগঞ্জ জেলা স্বার্থরক্ষা ফোরামের আহ্বায়ক ডা. এম. এ. লতিফ, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা মোস্তফা জামান, সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শরীফুল ইসলাম ইন্নাসহ রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, চিকিৎসক, সাংবাদিক, শিক্ষার্থী ও সাধারণ নাগরিকরা।
তারা হাসপাতালের জনবল সংকট, আধুনিক যন্ত্রপাতি চালু না করা, হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য স্থাপিত ক্যাথ-ল্যাব মেশিন স্থানান্তরের উদ্যোগ, বাথরুমের অস্বাস্থ্যকর অবস্থা ও সার্বিক সেবার মান নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদ জানিয়ে পরিচালকের কাছ থেকে সরাসরি জবাব চান।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের এনজিওগ্রাম ও রিং পরানোর জন্য হাসপাতালটিতে ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক ক্যাথ-ল্যাব মেশিন স্থাপন করা হলেও জনবল সংকটের কারণে সেটি এখনো চালু হয়নি। এর মধ্যেই কর্তৃপক্ষ মেশিনটি ঢাকায় স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারা পরিচালকের কাছে স্থানান্তরের কারণ জানতে চাইলে উপস্থিতদের অনুরোধে পরিচালক বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ক্যাথ-ল্যাব মেশিনটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন।
এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক এ টি এম নুরুজ্জামান বলেন, হাসপাতালের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। ক্যাথ-ল্যাব মেশিন স্থানান্তর করতেও ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকা খরচ হবে। দেশের বিভিন্ন জেলার মেশিন পরিদর্শন করতে একটি টিম ঘুরেছে, তবে এখনো স্থানান্তরের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা জানিয়েছি, এটি দরিদ্র এলাকা। এখানকার মানুষের চিকিৎসা সেবার জন্য এই মেশিনটি অপরিহার্য।
এর আগে বেলা ১১টায় শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল চত্বরে মানববন্ধনের আয়োজন করে সিরাজগঞ্জ স্বার্থ রক্ষা ফোরাম। সংগঠনটি নাম পরিবর্তন, শূন্যপদ পূরণ, জনবল নিয়োগ ও সেবার মান উন্নতিসহ পাঁচ দফা দাবি তোলে।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে শূন্যপদ দ্রুত পূরণ, জরুরি বিভাগ ও মেডিসিন বিভাগে নতুন পদ সৃষ্টি, পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ এবং ক্যাথ-ল্যাব মেশিন স্থানান্তরের ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে।
এ সময় বক্তব্য দেন সংগঠনের আহ্বায়ক ডা. এম. এ. লতিফ, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা মোস্তফা জামান, কমিউনিটি হাসপাতালের এমডি ডা. আব্দুল আজিজ, মনসুর আলী হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স মো. আজিম উদ্দীন, রজব আলী মেমোরিয়াল বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষার্থী মো. জিহাদ হাসান এবং সাহেরা আমির নার্সিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী স্বর্ণা খাতুন।
সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মুরাদ বলেন, মেডিসিন বিভাগের কোনো পদ নেই, অধ্যাপক পদও ফাঁকা। অনেক আধুনিক সরঞ্জাম থাকলেও সেগুলো চালানোর জন্য দক্ষ টেকনিশিয়ান নেই, ফলে সেগুলো দিনের পর দিন অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে।
অন্যদিকে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা মোস্তফা জামান বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্তভাবে প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন হলেও সিরাজগঞ্জে তা হয়নি। দ্রুত নাম পরিবর্তন করতে হবে। এই জেলার মানুষ দরিদ্র, তাই সেবার মান উন্নত করা সময়ের দাবি।
নাজমুল হাসান/আরএআর