শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় নলকূপ খনন করতে গিয়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের সন্ধান মিলেছে। উপজেলার রূপনারায়ণকুড়া ইউনিয়নের গাছগড়া গ্রামের নূর মোহাম্মদের বাড়িতে পানির বদলে পাইপের ভেতর দিয়ে গ্যাসে বের হচ্ছে। ওই গ্যাসে গত কয়েকদিন ধরে রান্নাবান্না করেন বাড়ির লোকজনসহ প্রতিবেশীরা। হঠাৎ নলকূপের ভেতর থেকে গ্যাস বের হওয়ার ঘটনায় এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। 

খবর পেয়ে দ্রুত প্রশাসন ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই এলাকা ঘিরে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে এবং জ্বালানি খাতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে অবহিত করেছে। গত কয়েক দিন ধরে ওই বাড়িতে গ্যাস দেখতে মানুষের ভিড় জমে।

স্থানীয়রা জানান, গত ১৪ অক্টোবর সকালে মিস্ত্রিরা টিউবওয়েলের বোরিং শুরু করলে ৫৫ ফুট গভীরে পৌঁছানোর পর থেকেই পাইপের মুখ দিয়ে অনবরত গ্যাস আসতে থাকে। পরে পরীক্ষামূলকভাবে আরেকটি স্থানে ৪০ ফুট গভীরে খনন করলেও একইভাবে গ্যাস বের হয়। ঝুঁকি জেনেও গত কয়েকদিন ধরে লোকজন গ্যাসটি বাড়ির চুলায় ব্যবহার করছিলেন। তবে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে এখন সেখানে রান্নার চুলা বন্ধ করে এলাকা ঘিরে দেওয়া হয়েছে।

বাড়ির মালিক নূর মোহাম্মদ বলেন, গ্যাস খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কতটা মজুত আছে বা চাপ কেমন এগুলো আমাদের জানা নেই। কখন কী হয় এই ভয়ে ছিলাম। তবে প্রশাসন হস্তক্ষেপ করায় কিছুটা নিশ্চিন্ত বোধ করছি। ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসনসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের লোকজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

স্থানীয় যুবক কামরুল ইসলাম বলেন, গ্যাস তো জাতীয় সম্পদ। পাশের জেলা জামালপুরেও সম্প্রতি গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। এখানেও বড় কোনো সম্ভাবনা থাকতে পারে। গত শনিবার থেকে প্রতিনিধি দল আসা-যাওয়া করছে। গতকাল তিতাস গ্যাসের টিম যন্ত্রের সাহায্যে পরীক্ষা করে আমাদের জানান যে, এখানে গ্যাসের উপস্থিতি রয়েছে।

রূপনারায়ণকুড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ হযরত আলী জানান, গ্যাস বের হওয়ার খবর পেয়ে তারা প্রথমে ঘটনাস্থলে যান এবং পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ভিডিওসহ বিস্তারিত তথ্য জানান। 
তিনি বলেন, ২৫ অক্টোবর বাপেক্সের একটি প্রতিনিধি দল এসে গ্যাসের নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে আতঙ্ক থাকলেও এখন আমরা আশাবাদী এখানে যদি গ্যাসের মজুত থাকে তবে এটি এলাকার জন্য আনন্দের বিষয়।

এ বিষয়ে তিতাস গ্যাসের শেরপুর জেলার ম্যানেজার বদরুদ্দোজা বলেন, প্রথমিক পরীক্ষায় আমরা গ্যাসের অস্তিত্ব পেয়েছি। তবে চাপ কম এবং এটি স্বল্পস্তরের। আমাদের পরীক্ষার ফলাফল বাপেক্সকে দেওয়া হয়েছে। তারা নমুনা নিয়ে ল্যাবে পরীক্ষা করছে। পরে বিস্তারিত জানা যাবে আসলে এখানে বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস উত্তোলনের মতো মজুত আছে কি না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা আক্তার ববি বলেন, ঘটনার খবর পাওয়ার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে এলাকা ঘিরে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাপেক্স এবং তিতাস মাঠপর্যায়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। তিতাস প্রাথমিকভাবে গ্যাস থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবে চূড়ান্ত মূল্যায়নের আগে বাপেক্সের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

প্রশাসন জানায়, বাপেক্সের পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষার ফলাফলের ওপর নির্ভর করবে পরবর্তী করণীয় কী হবে।

নাইমুর রহমান তালুকদার/আরএআর