কাজল মিয়া ঝালমুড়ি ও চানাচুর বিক্রি করেন। সুযোগ পেলেই তার শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলে সাজনকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে বেরিয়ে পড়েন ঘুরতে। কাজল মিয়ারও কষ্ট হয়। কারণ, দীর্ঘদেহী সন্তানকে কোলে করে একা একা বিছানা থেকে হুইলচেয়ারে বসাতে হয়। এদিকে সাজনের সব কাজেই যেন বাবাকেই চাই। শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও তার মুখে শুধু বাবা ডাকটা স্পষ্ট শোনা যায়।

কাজল ও সবুজা দম্পতির ছোট ছেলে সাজন (১৮)। জন্মগতভাবে সে শারীরিক প্রতিবন্ধী। দীর্ঘদেহী সাজনের শরীরের ওজন বেশি। তবু কমেনি সন্তানের প্রতি বাবার ভালোবাসা। কাজল শেরপুর পৌর শহরের বাগরাকসা মহল্লায় সপরিবার বসবাস করেন। পেশায় তিনি ঝালমুড়ি ও চানাচুর বিক্রেতা।

সুযোগ পেলেই শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে শহরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে বের হই, এমনটা জানিয়ে কাজল ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাজনের মা তাকে নড়াচড়া করতে পারে না। তাই সাজনকে গোসল করানো, কাপড় পরানো, খাবার খাওয়ানো, ঘুরতে নিয়ে যাওয়া, ফুচকা খাওয়ানো― সবই আমাকে করতে হয়। এ জন্য সাজন আমার প্রতি দুর্বল। আমিও বাবা হিসেবে ছেলের জন্য সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করি।

একপর্যায়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কাজল মিয়া বলেন, আমার আরও একটা ছেলে আছে। তার নাম সজিব (২২)। সে কলেজে পড়ে। তাকে নিয়েও আমাকে ভাবতে হয়। অল্প পুঁজির ব্যবসায় আমি হাঁপিয়ে উঠেছি। অন্যদিকে করোনা মহামারি কারণে মানুষ এখন বাইরের খোলা খাবার ঝালমুড়ি ও চানাচুর খেতে চায় না। তাই ব্যবসা হয় না। চারজনের সংসার চালাতে আমাকে হিমশিম খেতে হয়।

সাজনের মা সবুজা বেগম বলেন, এখন সাজনের বয়স ১৮। আর বিশাল দেহটাকে নড়াচাড়াও তো কষ্টের। তবু সাজনের বিষয়ে তার বাবা কখনো বিরক্ত বোধ করেন না। বাবা-ছেলের এমন ভালোবাসা দেখে প্রতিবেশীরাও প্রশংসা করেন।

এ বিষয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আজকের তারণ্যর সভাপতি মো. রবিউল ইসলাম রতন বলেন, আমরা প্রায়ই দেখি কাজল ভাই সাজনকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে শহরের কোলাহালমুক্ত পরিবেশে ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন। তাদের বাবা-ছেলের সম্পর্কটা অন্য রকম। সত্যিই এমন বাবাকে আমরা শ্রদ্ধা জানাই।

মানবাধিকার সংস্থা আমাদের আইন শেরপুর জেলার চেয়ারম্যান নূর ই আলম চঞ্চল ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। সারাদিন পরিশ্রম করার পর কাজল যতটুকু সময় পান, সেটুকু সময় ছেলেকে দেন। বাবা-ছেলের এ রকম গল্প আসলেই ভিন্ন। সমাজসেবা অধিদফতর থেকে ছয় মাস পরপর তাদের ভাতা দেওয়া হয়। তবে সমাজের ধনাঢ্য ব্যক্তিরা এগিয়ে এলে সাজন আরও একটু ভালো থাকতে পারবে।

এ ব্যাপারে জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আরিফুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাজনের জন্য প্রতিবন্ধী কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। সে নিয়মিত ভাতা পায়। তবে তার পরিবার থেকে আবেদন করলে সাজনের চিকিৎসা বাবদ আরও আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।

এনএ