তালিমে হামলার ঘটনায় বিএনপিকে দায়ী করলেন জামায়াত নেত্রী
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে মহিলা জামায়াতের তালিম প্রোগ্রামে হামলার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে উপজেলা জামায়াতের মহিলা বিভাগ। বুধবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে সোনাইমুড়ী প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপজেলার ৯নং দেওটি ইউনিয়ন মহিলা জামায়াতের সভানেত্রী ফাতেমা বেগম।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, গত মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) বিকেলে উপজেলার উত্তর দেওটি গ্রামের মাঈন উদ্দিন বেপারী বাড়িতে মহিলা জামায়াতের উদ্যোগে শান্তিপূর্ণ কুরআন তালিম প্রোগ্রাম চলাকালে স্থানীয় বিএনপির অঙ্গসংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দলের নবগঠিত ইউনিয়ন সদস্য মোহাম্মদ রবিন ওরফে রনি, শাহ আলম, মো. লিটনসহ কয়েকজন অজ্ঞাত ব্যক্তি হামলা ও ভাঙচুর চালায়।
বিজ্ঞাপন
লিখিত বক্তব্যে ফাতেমা বেগম বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি আইনানুগ ও সুশৃঙ্খল সংগঠন। দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নে আমরা নারীদের কুরআন শিক্ষা ও ইসলামী আদর্শে উদ্বুদ্ধ করতে কাজ করে যাচ্ছি। এটি আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রমের অন্যতম দফা। অথচ শান্তিপূর্ণভাবে কুরআন তালিমের আয়োজন করার পরও আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, হামলাকারীরা প্রোগ্রামস্থলে গিয়ে চেয়ার ভাঙচুর করে এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। আমরা বাড়ির মালিকের অনুমতি নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে প্রোগ্রাম করছিলাম। অথচ তারা প্রশ্ন তোলে— কে অনুমতি দিয়েছে, কেন এখানে আয়োজন করা হয়েছে!
বিজ্ঞাপন
ফাতেমা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যাদের কাছে কুরআনের তালিম প্রোগ্রামও নিরাপদ নয়, তাদের কাছে জাতির ভবিষ্যৎ নিরাপদ থাকতে পারে না। বিএনপির এ হামলা নারীদের গণতান্ত্রিক অধিকার ও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নগ্ন হস্তক্ষেপের জঘন্য উদাহরণ।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, বিএনপি প্রমাণ করেছে তারা গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক সহনশীলতার সংস্কৃতি মানতে চায় না। আমরা এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা জামায়াতে ইসলামী ও মহিলা বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জামায়াতে ইসলামী মহিলা বিভাগের উদ্যোগে ওই বাড়ির উঠানে তালিমের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠান শুরুর আগমুহূর্তে দেওটি ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য মো. রবিন, শাহ আলম ও লিটনসহ কয়েকজন সেখানে গিয়ে আয়োজকদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। অনুমতি ছাড়াই তালিমের আয়োজন করা হয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেন। একপর্যায়ে হুমকি-ধমকি দিয়ে চেয়ার ভাঙচুর ও অনুষ্ঠান পণ্ড করে দেন বলে অভিযোগ ওঠে।
এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মো. রবিন মহিলা জামায়াতের এক কর্মীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘রাজনৈতিক তালিম এটা। রাজনৈতিক তালিম করতে আসছিস তোরা। তুই তালিম করতে আসছিস, তোর চোখ দেখা যায়, হাত দেখা যায়! শয়তান! তোর নিজের পর্দার ঠিক নাই, আরেকজনরে পর্দা করতে বলিস। তুই বাড়িতে আসছিস রাজনৈতিক আলাপ করতে।’
এদিকে অভিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মো. রবিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মহিলা তালিম তো সাধারণত ঘরের ভেতরে, পর্দার ভেতরে হয়। এভাবে বড় করে ডেকোরেশনের চেয়ার এনে তো মহিলা তালিম হয় না। হলেও তো বাড়ির লোকজনের জানার কথা। আমরা কেউ তো সেটা জানতাম না। আমাদের বাড়িতে আমাদের অনুমতি না নিয়ে এমন রাজনৈতিক আয়োজন করায় আমি প্রতিবাদ করেছি।
এ বিষয়ে জানতে সোনাইমুড়ী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক দিদার হোসেনকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। ফলে তার মতামত যুক্ত করা সম্ভব হয়নি।
হাসিব আল আমিন/আরএআর