প্রতিদিন ভোরে দেখা হয় তাদের, বন কর্মকর্তা ও ঈগল পাখির অদ্ভুত সখ্যতা
প্রতিদিন ভোরের আলো ফুটলে নিয়ম করে সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগের করমজল বন্যপ্রাণি প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসে তার এক বন্ধু। তবে এই বন্ধু আসে পায়ে হেঁটে নয়, ডানা ঝাপটে। কারণ তার বন্ধু হলো এক ঈগল পাখি।
তাদের মাঝে কোনো ভাষা নেই, কোনো প্রতিশ্রুতি নেই, তবু রয়েছে বিশ্বাস ও টান। আজাদ কবিরের সঙ্গে ঈগলটির বন্ধন যেন প্রকৃতি আর মানুষের মধ্যকার সরল, অথচ গভীর যোগাযোগের এক জীবন্ত সাক্ষী।
বিজ্ঞাপন
বন কর্মকর্তা আজাদ কবির প্রতিদিন ভোরে হাঁটতে বের হন। বেশ কিছুদিন ধরে প্রজনন কেন্দ্রের ওসির বাসভবনের সামনে এক গাছের ডালে তার অপেক্ষায় নিঃশব্দে বসে থাকে এই ঈগল পাখি।
বিজ্ঞাপন
আজাদ কবির বলেন, এই ঈগল পাখিটির সাথে বন্ধুত্ব বেশিদিনের নয়। প্রথমবার যখন পাখিটিকে দেখলাম, মনে হচ্ছিল এটা কোনো স্বপ্নের মতো। আমি আমার খাওয়ার জন্য রাখা কিছু মাছ বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। পাখিটি একটু সময় নিয়ে খেয়ে নিল। পরের দিন আবারও সে সেই একই ডালে হাজির হলো। এরপর থেকে প্রতিদিন আমাদের এই দেখা-সাক্ষাৎ চলে। খাবার পেলে খেয়ে নেয়, কখনও মাথা কাত করে সায় দেয়- যেন এক নীরব আলাপ। এভাবে দিনের পর দিন চলছে তাদের এই অদ্ভুত সম্পর্ক।
স্থানীয় দর্শনার্থী মমতাজ বেগম বলেন, আমি প্রতিদিন সকালে এখানে হাঁটতে আসি। আজাদ স্যারের সঙ্গে এই পাখির বন্ধন দেখে মন খুশি হয়। এটা দেখলে মনে হয়, প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক কতটা সুন্দর হতে পারে।
স্থানীয় রুবেল হোসেন যোগ করেন, পাখিটি যেভাবে আজাদ স্যারের দিকে আসে, খায়, আবার উড়ে যায় সেটা দেখলে মনে হয় সত্যিই তার বন্ধু। প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের সংযোগের এক নরম স্পর্শ।
প্রজনন কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা আজাদ কবির বলেন, এই ধরনের ঘটনাগুলো শুধু সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যকে সামনে আনে না, পাশাপাশি মানুষের সঙ্গে বন্যপ্রাণির বন্ধনও তুলে ধরে। আমরা প্রজাতির সঙ্গে সংযোগ রাখতে পারলে প্রকৃতিকে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারব। এই ঈগলটি আমার ছোট্ট বন্ধু, এবং তার সঙ্গে প্রতিদিনের এই আলাপ আমাদের শেখায় সহমর্মিতা ও সংযম।
এছাড়া, প্রজনন কেন্দ্রের মিঠাপুকুর থেকে কুমির প্রজননের কাজও চলতে থাকে। আজাদ কবির বলেন, আমাদের কেন্দ্রের দায়িত্ব শুধু বন সংরক্ষণ নয়, বরং বন্যপ্রাণির প্রজনন ও সংরক্ষণও। এখানে প্রতিটি প্রাণীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের মূল লক্ষ্য।
আজাদ কবিরের সহকর্মী ওবায়েদ মাসুদ বলেন, তিনি বহুদিন ধরে সুন্দরবনের করম জলে রয়েছেন। সেখানে কুমিরের সঙ্গে তার আলাদা একটি সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। কুমির রোমিও-জুলিয়েট বলে ডাকেই ওরা পুকুর থেকে বেরিয়ে আসে। সম্প্রতি, একটি ঈগল ও তার অদ্ভুত বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছে। এটি আজাদ কবিরের সাথে দেখা করতে গত এক সপ্তাহ ধরে নিয়মিত কেন্দ্রটিতে আসছে। ঈগলটির সঙ্গে তার বন্ধুত্ব এখন দৃঢ় এবং চোখে পড়ার মতো।
সুন্দরবনে বন কর্মকর্তার সঙ্গে এক ঈগল পাখির এই বন্ধন শুধু কল্পনার নয়, বরং বাস্তব। এটি মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির সরল, অথচ গভীর সম্পর্কের এক জীবন্ত প্রমাণ। প্রতিদিনের এই ছোট্ট ঘটনার মধ্যে লুকিয়ে আছে বিশ্বাস, মায়া ও সৌন্দর্যযা শুধু চোখে দেখা যায় না, হৃদয়ে অনুভব করা যায়।
শেখ আবু তালেব/আরকে