পুকুরে ডুবে মারা যাওয়া ৩ বছর বয়সী একমাত্র কন্যা শিশুকে শেষ বিদায় জানাতে সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ছুটে এসেছেন ওসমান গণি ওরফে বাদল নামের এক প্রবাসী।

শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) সকালে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন তিনি। পরে সেখান থেকে হেলিকপ্টারে চেপে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের নিজ বাড়িতে আসেন ওসমান গণি।

প্রবাসী ওসমান গণি ওরফে বাদল চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামের শফিকুর রহমানের ছেলে।

স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বিকেলে প্রবাসী বাদলের একমাত্র কন্যাশিশু আরওয়া আক্তার (৩) পানিতে ডুবে মারা যায়। খবর পেয়ে ওইদিন বিকেলেই বিমানের টিকিট কাটেন ওসমান গণি। শুক্রবার সকালে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। সড়ক পথে যানজটের কারণে দেরি হতে পারে ভেবে একটি বেসরকারি কোম্পানির হেলিকপ্টার ভাড়া করে বাড়িতে আসেন বাদল। শুক্রবার সকাল পৌনে ১০টায় পাশের গুণবতী ডিগ্রি কলেজ মাঠে হেলিকপ্টারটি অবতরণ করে। পরে সেখানে থেকে বাড়িতে গিয়ে একমাত্র সন্তানের লাশ দেখতে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। বেলা ১১টায় জানাজা শেষে আরওয়ার মরদেহটি দাফন করা হয় পারিবারিক কবরস্থানে।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে  দীর্ঘ ধরে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রবাস জীবন কাটাচ্ছেন ওসমান গণি ওরফে বাদল। বছর পাঁচেক আগে বিয়ে করেন তিনি। বিয়ের দুই বছর পর কন্যা সন্তানের বাবা হন তিনি। নাম রাখেন আরওয়া আক্তার।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল দুপুরে দাদা শফিকুর রহমান বাড়ির বাইরে যাচ্ছিলেন। তখন দাদার পিছু নেয় শিশু আরওয়া। এ সময় বৃদ্ধ শফিকুর রহমান নাতনিকে বসতঘরের দিকে পাঠিয়ে চলে যান নিজের কাজে। কিছুক্ষণ পর বাড়িতে ফিরে দেখেন, নাতনিকে পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর শুরু হয় চারদিকে খোঁজাখুঁজি। স্বজনেরা সবাই মিলে খুঁজতে থাকার একপর্যায়ে বাড়ির পাশের পুকুরে আরওয়ার নিথর দেহ ভেসে ওঠে। এই খবর জানানো হয় দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকা আরওয়ার বাবা ওসমান গণিকে। তিনি সিদ্ধান্ত নেন, একমাত্র সন্তানকে শেষ বিদায় জানাবেন। বাবার ইচ্ছা অনুযায়ী শিশুটির লাশ রাখা হয় লাশবাহী ফ্রিজিং ভ্যানে।

একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে কন্যাজড়িত কণ্ঠে প্রবাসী ওসমান গণি সাংবাদিকদের বলেন, “আমি আট মাস আগে ছুটি শেষে সাউথ আফ্রিকায় গিয়েছিলাম। বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার (গতকাল) বিকেলে বাড়ি থেকে খবর পাই, আমার মেয়ে আরওয়া পানিতে পড়ে মারা গেছে। খবরটা শুনতেই বুকটা ফেটে গেছে। মেয়েটার সাথে কত স্মৃতি। মেয়েটি ভাঙা ভাঙা শব্দে আমার সাথে কথাও বলত। একমাত্র সন্তানের মৃত্যুর খবর কোনো অবস্থাতে মেনে নিতে পারছিলাম না। তাই সিদ্ধান্ত নিই, আমার সন্তানকে দাফন করতে আমি বাড়িতে যাব।”

আরিফ আজগর/এসএমডব্লিউ