সুন্দরবনের পর্যটন মানচিত্রে যুক্ত হতে যাচ্ছে নতুন একটি গন্তব্য- আলীবান্দা ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র। চলতি মাসেই এটি ভ্রমণপিপাসুদের জন্য খুলে দেওয়া হবে। সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগ জানায়, কেন্দ্রটি চালুর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

বাগেরহাটের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন এই অত্যাধুনিক পর্যটন কেন্দ্রকে ঘিরে স্থানীয় ট্যুরিজম ব্যবসায়ী ও দর্শনার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখা দিলেও, উচ্চ রাজস্ব নির্ধারণে দেখা দিয়েছে হতাশা। করমজল প্রজনন কেন্দ্রের তুলনায় প্রায় আট গুণ বেশি রাজস্ব নির্ধারণ করায় ক্ষোভে ফুঁসছে অনেকে।

প্রকৃতিপ্রেমীদের সুন্দরবন ভ্রমণ আরও আকর্ষণীয় করতে আলীবান্দা ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়েছে। শরণখোলা উপজেলা সদর থেকে নদীপথে মাত্র ৪০ মিনিটের দূরত্বে হওয়ায় এটি দ্রুতই জনপ্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠবে বলে আশা করছে বন বিভাগ ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

২০২২-২৩ অর্থবছরে শুরু হওয়া এই প্রকল্পে নির্মিত হয়েছে এক কিলোমিটার দীর্ঘ ফুটট্রেইল, যেখানে হাঁটতে হাঁটতে দুপাশে সারি সারি সুন্দরী গাছের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করা যাবে। এছাড়া রয়েছে ৫০ ফুট উঁচু ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে এক নজরে দেখা যাবে সুন্দরবনের নয়নাভিরাম দৃশ্য।

দর্শনার্থীদের আকর্ষণ বাড়াতে এখানে তৈরি করা হয়েছে হরিণ রাখার জন্য বিশেষ শেড ও কুমিরের জন্য পুকুর। পাশাপাশি রয়েছে গোল ঘর, সুভেনির শপ, টিকিট কাউন্টার, খোলা রাস্তা ও আধুনিক পাবলিক টয়লেট। জানা গেছে, নভেম্বরের প্রথম দিকেই এখানে হরিণ ও কুমির আনা হবে।

তবে আনন্দের এই আবহে ছায়া ফেলেছে রাজস্ব বৈষম্য। বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে করমজল প্রজনন কেন্দ্রে প্রবেশমূল্য ৪৬ টাকা, কিন্তু আলী বান্দায় নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪০ টাকা। একই বনের ভেতরে এমন বৈষম্য মেনে নিতে পারছেন না ট্যুরিজম ব্যবসায়ী ও দর্শনার্থীরা।

স্থানীয় ট্যুরিজম ব্যবসায়ী মো. মনিরুল জামান বলেন, একই সুন্দরবন, কিন্তু রাজস্বের এত তফাৎ কেন? করমজলের মতো আলীবান্দাতেও রাজস্ব ৪৬ টাকাই রাখা উচিত। এত টাকা দিলে মানুষ আসবে না, এতে আমাদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রাসেল আহাম্মেদ বলেন, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একই বনের জন্য দুই রকম রাজস্বের নিয়ম অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে দ্রুত দুটি পল্টন নির্মাণেরও দাবি জানাচ্ছি।

দর্শনার্থী আব্দুর রশীদ বলেন, নতুন কেন্দ্র হচ্ছে শুনে ভালো লেগেছিল, কিন্তু যদি টিকিট করমজলের আট গুণ বেশি হয়, তাহলে সাধারণ মানুষ এত খরচে আসবে কেন? বন বিভাগের উচিত রাজস্বের হার কমানো।

আরেক স্থানীয় দর্শনার্থী সুরমা আক্তার বলেন, লোকালয়ের কাছে হওয়ায় আমরা খুশি হয়েছিলাম, কিন্তু পরিবারের সবাইকে নিয়ে গেলে এত টাকা খরচ করা সম্ভব নয়। এতে সাধারণ মানুষের জন্য সুন্দরবন ভ্রমণ কঠিন হয়ে যাবে।

রাজস্ব বৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, আলীবান্দা এলাকা মূলত বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, যা ২০১৭ সালে ঘোষিত হয়। অভয়ারণ্যে রাজস্ব সাধারণত কিছুটা বেশি রাখা হয়। তবে পর্যটন উৎসাহিত করতে রাজস্ব কমানোর বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করব।

উল্লেখ্য, আলীবান্দা ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্রসহ সুন্দরবন পূর্ব বিভাগে এখন মোট চারটি নতুন ট্যুরিজম কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, বন বিভাগ দ্রুত এই রাজস্ব বৈষম্য দূর করে সুন্দরবনের নতুন এই দুয়ারটি সাধারণ পর্যটকদের জন্য আরও সহজলভ্য করে তুলবে।

শেখ আবু তালেব/এআরবি