আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২৩৭ আসনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে বিএনপি। ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেয়ে প্রচারণার মাঠে নেমেছে রংপুরের প্রার্থীরা।

মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে কেরামতিয়া জামে মসজিদে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে জোহরের নামাজ আদায় করেন রংপুর-৩ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সামসুজ্জামান সামু। পরে তিনি মসজিদ প্রাঙ্গণে শায়িত শাহ্ কারামত আলী (র:) জৌনপুরীর মাজার জিয়ারত করে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন।

রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু কারামতিয়া জামে মসজিদ থেকে বের হয়ে কোর্ট চত্বর, কাচারী বাজার, সিটি বাজার ও নবাবগঞ্জ বাজার (গুদরি বাজার) এলাকায় গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেন। এসময় তিনি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে তাদের খোঁজখবর নেন।

এর আগে, কারামতিয়া জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সামসুজ্জামান সামু বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে এ আসনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা সদরের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন করতে পারেনি। জাতীয় পার্টির দখলে থাকা এ আসনটি পুনরুদ্ধারের মধ্য দিয়ে এবার কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হবে। দল থেকে মনোনয়ন পাওয়ায় জনগণের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। জনগণ এবার পরিবর্তন চায়। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে ভোটের মাঠে নামছি। বিএনপির নিরঙ্কুশ বিজয় নিশ্চিত হবে।

তিনি আরও বলেন, একটি পরিকল্পিত ‘সমৃদ্ধ রংপুর’ গড়তে চাই। এ জন্য সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে পরামর্শ সভা করেছি। সবার কাছে রংপুরের উন্নয়নে ১৯টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেছি। পূর্বের অবস্থা পরিবর্তন করতে এবার রংপুরের মানুষ প্রার্থী নির্বাচনে ভুল করবে না।

সামসুজ্জামান সামু বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমার প্রতি আস্থা রেখেছেন। আমাকে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছে। এজন্য কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমি মনোনয়ন পেয়ে যতটুকু সন্তুষ্ট হয়েছি, তার চেয়ে বেশি সন্তুষ্ট হয়েছে দলীয় নেতাকর্মী ও রংপুরের সাধারণ মানুষজন। তারা মনে করে আমার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, জনসম্পৃক্ততা ও ত্যাগের কারণে দল সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

নির্বাচনী গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণের সময় মহানগর বিএনপির সদস্য ও সাবেক কাউন্সিলর মকবুল হোসেন, জেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শাহ জিল্লুর রহমান জেমস্, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আকিবুর রহমান মনু, কোষাধ্যক্ষ আশরাফুল ইসলাম, মহানগর ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক শফিউল ইসলাম সবুজ, যুগ্ম আহ্বায়ক অরুপ রাজ, মহানগর কৃষক দলের সদস্য সচিব ফিরোজ হোসেন পিন্টু, মহানগর ওলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা জামাল উদ্দীন ফয়জী, সদস্য সচিব হাফেজ নুর হক শাহসহ মহানগর ও ওয়ার্ড বিএনপিসহ দলের অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

রংপুর সিটি করপোরেশনের ৯ থেকে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড ও সদর উপজেলার পাঁচ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত রংপুর-৩ আসন। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে এই আসনে বিএনপি শুধু একবার জয় পেয়েছে। তাও আবার ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে। এখানে ধানের শীষ প্রতীকে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন অ্যাডভোকেট রেজাউল হক সরকার রানা।

এ আসনে ভোটার চার লাখের বেশি। দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় পার্টি শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে। এই আসনে সর্বশেষ নির্বাচনে জয় পেয়েছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। সোমবার সন্ধ্যায় দলীয় মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সামসুজ্জামান সামুর নাম ঘোষণার পর থেকেই বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। তারা জানান, স্থানীয় নেতৃত্ব ঐক্যবদ্ধ থাকলে জাতীয় পার্টির এই ঘাঁটিতে বিএনপি প্রার্থী বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হতে পারবে।

রংপুর-৩ আসনটিতে সামসুজ্জামান সামুর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রয়েছেন- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের প্রার্থী ও দলটির কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, বাংলাদেশ ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন (চরমোনাই) প্রার্থী ও দলটির রংপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আমিরুজ্জামান পিয়াল। আলোচনায় রয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির রংপুর মহানগর কমিটির যুগ্ম সমন্বয়ক আলমগীর হোসেন নয়ন। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেলে এই আসনে প্রার্থী হতে পারেন জাতীয় পার্টির জি এম কাদের।

এদিকে পীরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত রংপুর-৬ আসনে দল মনোনীত প্রার্থী ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলামও মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে তার প্রচারণা কার্যক্রম শুরু করেন।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরকে