ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল এখন নিজেই অসুস্থ। ধারণক্ষমতার তিন গুণ রোগী, চিকিৎসক ও নার্সের সংকট, অপরিষ্কার পরিবেশ সব মিলিয়ে এখানে স্বাস্থ্যসেবার চিত্র করুণ। শয্যার অভাবে রোগীকে গাছের নিচে রিকশা ভ্যানে শুয়ে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে।

হাসপাতাল চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, ওয়ার্ডে ঠাঁই না পেয়ে গাছের নিচে রিকশা ভ্যানে চিকিৎসা নিচ্ছে এক শিশু। তার নানী নাসিমা বেগম ক্ষোভের সঙ্গে জানান, ভেতরে এত দুর্গন্ধ যে নাক চেপেও থাকা যায় না। নাতি কান্না করায় ওয়ার্ড ছেড়ে বাইরে এসে চিকিৎসা নিচ্ছি।

হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, মোট অনুমোদিত পদ ২২১টি, যার মধ্যে ৫৬টিই শূন্য। ৫৯ জন প্রথম শ্রেণির চিকিৎসকের বিপরীতে কর্মরত মাত্র ৪০ জন। ২৫০ শয্যার বিপরীতে প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৭০০ রোগীর ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে।

সদর উপজেলার মাজেদা, লিপি, আঁখি ও আসমাসহ অন্যান্য রোগী ও স্বজনদেরও একই অভিযোগ। নোংরা পরিবেশ, শয্যার অভাব এবং হাসপাতাল থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও পরীক্ষার সুযোগ না পাওয়ায় তাদের বাইরে ছুটতে হচ্ছে। হাসপাতালের করিডোর, বাথরুম, এমনকি ওয়ার্ডেও চরম অপরিষ্কার পরিবেশ।

শিশু ওয়ার্ডে কর্মরত সিনিয়র স্টাফ নার্স রেখা রানী বলেন, পরিচ্ছন্নতাকর্মীর অভাবে দুর্গন্ধে আমাদের কাজ করতেও অসুবিধা হচ্ছে। ৪৫ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে বর্তমানে ভর্তি প্রায় ১৬০টি শিশু রয়েছে, যাদের অধিকাংশই শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে ৬৭টি শিশু, যা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।

হাসপাতালের ভেতরে কুকুরের অবাধ বিচরণও দেখা যায়। রোগী ও স্বজনরা অভিযোগ, নোংরা পরিবেশে সুস্থ হতে এসে উল্টো অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। শৌচাগারগুলো অচল, পানি সংকট রয়েছে নিয়মিত। ওয়ার্ডের মেঝেতে জমে থাকা নোংরা পানি থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। রোগীরা বলছেন, অসুখ সারাতে এসে আরও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি।

জানা গেছে, গুরুতর অব্যবস্থাপনার কারণে হাসপাতালের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র), ডায়ালাইসিস ইউনিট, পিসিআর ল্যাবের জন্য স্থান প্রস্তুত থাকলেও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও জনবলের অভাবে সেগুলো তালাবদ্ধ। দুটি লিফটের মধ্যে একটি নষ্ট থাকায় গুরুতর রোগী ও বয়স্কদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

এই হাসপাতালটি শুধু ঠাকুরগাঁওয়ের নয়, পঞ্চগড়, দিনাজপুরের বীরগঞ্জ ও কাহারোলসহ ১২ উপজেলার মানুষেরও একমাত্র ভরসা। কিন্তু অতিরিক্ত রোগীর চাপ আর জনবল সংকটের কারণে কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মনজুরুল ইসলাম বলেন, রোগীর চাপ আমাদের সক্ষমতার অনেক বেশি। এক শিফটে ২০-২৫ জন নার্স দিয়ে ৬০০-৭০০ রোগীর সেবা দেওয়া অসম্ভব। তবুও আমরা সাধ্য অনুযায়ী চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

রেদওয়ান মিলন/আরকে