পদ্মা নদীর চারটি চরে ‘অপারেশন ফাস্ট লাইট’ চালিয়ে ৬৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রাজশাহী জেলার পদ্মার চর থেকে ১৪ জন, নাটোর থেকে ২০ জন, পাবনা থেকে ২৪ জন এবং কুষ্টিয়া থেকে ৯ জনকে আটক করা হয়েছে।

রোববার (৯ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টায় রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজির কনফারেন্স রুমে সংবাদ সম্মেলনে এই গ্রেপ্তার ও অস্ত্র উদ্ধার সম্পর্কে গণমাধ্যমকে জানানো হয়। এর আগে শনিবার (৮ নভেম্বর) রাত থেকে রোববার (৯ নভেম্বর) সকাল পর্যন্ত পুলিশ, র‍্যাব ও এপিবিএনের প্রায় ১ হাজার ২০০ জন সদস্য কুষ্টিয়া, পাবনা, নাটোর ও রাজশাহী পদ্মার চরে অভিযান পরিচালনা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, অভিযানে মোট ৫৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসময় উদ্ধার করা হয়েছে ১০টি অস্ত্র, চার রাউন্ড গুলি, দুইটি গুলির খোসা, ২৪টি হাসুয়া, ৬টি ডেসার, ২টি ছোরা, ৪টি চাকু, ৩টি রামদা, ২টি চাইনিজ কুড়াল, ২০ বোতল ফেসনিডিল, ৫০ পিস ইয়াবা, ৮০০ গ্রাম গাঁজা, ৫টি মোটরসাইকেল ও একটি লোহার পাইপ।

রাজশাহী জেলার পদ্মার চর থেকে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে চারজন ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি, ছয়জন মাদক কারবারি, দুইজন ডেভিল হান্ট এবং দুইজন সর্বহারা। এ সময় উদ্ধার হয় তিনটি ওয়ান শুটারগান, একটি গুলি, একটি খোসা, ২০ বোতল ফেসনিডিল, ৫০ পিস ইয়াবা, ৮০০ গ্রাম গাঁজা, ৫টি মোটরসাইকেল, একটি হাসুয়া ও একটি ছোরা।

নাটোর জেলার পদ্মার চর থেকে ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে চারজন হ্যাকার, ছয়জন ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি, একজন সাজাপ্রাপ্ত, একজন হত্যা মামলার আসামি, দুইজন মাদক কারবারি এবং ছয়জন সন্দিগ্ধ। উদ্ধার হয় দুটি শুটারগান, একটি রিভলবার, ২২টি হাসুয়া, ৬টি ডেগার, চারটি চাকু, চারটি চাপাতি, একটি রামদা ও একটি পাইপ।

পাবনা জেলার পদ্মার চর থেকে ২৪ জনকে আটক করা হয়। এদের মধ্যে একজন সর্বহারা, দুইজন মামলার আসামি, সাতজন ওয়ারেন্টভুক্ত, দুইজন ডেভিল হান্ট, চারজন মাদক এবং ৮ জন নিয়মিত মামলার আসামি। এসময় উদ্ধার করা হয় দুটি শুটারগান, তিনটি গুলি, একটি খোসা, দুটি পাইপগান, দুটি চাইনিজ কুড়াল, দুটি রামদা, একটি হাসুয়া ও একটি ছোরা।

কুষ্টিয়ার পদ্মার চর থেকে ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে আটজন ওয়ারেন্টভুক্ত এবং একজন নিয়মিত মামলার আসামি। এই অভিযানে বাঘা থানার ডাবল মার্ডার ও ডাকাতিতে ব্যবহৃত একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকা, একটি স্পিডবোড, অস্ত্র রাখার একটি সিলিন্ডার, দুটি তাবু এবং পাঁচটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে জেলা পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশ জানায়, রাজশাহী, নাটোর, পাবনা ও কুষ্টিয়ার পদ্মার চরে কাঁকন বাহিনীসহ ১১টি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয়দের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে। রোকনুজ্জামান কাঁকন ইঞ্জিনিয়ার কাঁকন নামে পরিচিত। তার বাহিনীর নৃশংসতার কারণে চরাঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন উদ্বিগ্ন। অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে মন্ডল বাহিনী, টুকু বাহিনী, সাঈদ বাহিনী, লালচাঁদ বাহিনী, রাখি বাহিনী, শরীফ কাইগি বাহিনী, রাজ্জাক বাহিনী, চল্লিশ বাহিনী, বাহান্ন বাহিনী, সুখচাঁদ বাহিনী ও নাহারুল বাহিনী। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এসব বাহিনীকে ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

প্রসঙ্গত, ২৭ অক্টোবর কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের হবিরচরে কাঁকন বাহিনীর গোলাগুলিতে বাঘা উপজেলার নিচখানপুরের আমান মন্ডল ও নাজমুল মন্ডলের মৃত্যু হয়। পরের দিন ২৮ অক্টোবর হবিরচর থেকে লিটন নামের এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ ধারণা করছে, নিহত লিটন কাঁকন বাহিনীর সদস্য ছিলেন।

শাহিনুল আশিক/এআরবি