রঙিন পোশাকে সেজে নারীদের গানের সুর আর মাদলের তালে তালে ঘুরে ঘুরে লাঠি খেলায় মাতলেন ‘ওঁরাও’রা। কিছুক্ষণ পরই আরেকদল নারী হাজির হলেন বিয়ে ও কারাম গীতের সুরে, দাশাই নৃত্যের ছন্দে নাচ নিয়ে। সোমবার (১০ নভেম্বর) বিকেলে রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার রিসিকুল ইউনিয়নের কাদমা গ্রামে রক্ষাগোলা এলাকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্যরা এসব পরিবেশন করেন।

গত শনিবার (৮ নভেম্বর) শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠান শেষ হয় সোমবার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যায়। অনুষ্ঠানকে ঘিরে কাদমা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত হয় বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক সম্মেলন ও প্রতিযোগিতা। এর আয়োজন করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সিসিবিভিও। এতে রক্ষাগোলার ৩৫টি গ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্যরা শিল্প, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের নানা দিক তুলে ধরেন। মেলা প্রাঙ্গণে বসে হস্তশিল্প, কৃষি ও শিকার সরঞ্জাম, ঐতিহ্যবাহী গহনা ও পোশাক, ভেষজ ওষুধ এবং স্থানীয় খাবারের স্টল।

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্যদের ভাষ্য অনুযায়ী, এটি তাদের হারিয়ে যাওয়া ভাষা, শিল্প, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষার উৎসব। এখানে ২৫টি স্টলে তারা তাদের জীবিকা ও সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত নানা উপকরণ প্রদর্শন করেন। এসব স্টলে ছিল ঢেঁকি, কুদাল, তীরধনুক, শিংয়ের বাঁশি, পশু ধরার ফাঁদ, গৃহস্থালির তৈজসপত্র, ঝিনুক, শামুক, কাকড়া, বেজি প্রভৃতি। এই আয়োজন উপভোগ করেন আশপাশের হাজারো মানুষ।

রীতা মুন্ডা নামের এক কিশোরী বলেন, এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমাদের ভাষা, শিল্প, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরা হচ্ছে। এতে নতুন প্রজন্ম জানতে পারছে নিজেদের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে। এ উৎসবের মাধ্যমে শুধু ঐতিহ্য সংরক্ষণই নয়, আমাদের বিভিন্ন দাবিও প্রকাশ করা হয়। প্রতিবছর তানোর ও গোদাগাড়ী উপজেলা থেকে আমাদের সম্প্রদায়ের মানুষ এই অনুষ্ঠান উপভোগ করতে আসে। এবারও এসেছে।

এর আগে অস্থায়ী মঞ্চের সামনে সাঁওতাল, মাহালি, পাহাড়িয়া, মুন্ডা, রাজোয়াড়, গড়াইত, রায়, কোল, মাহাতো, লহড়া এসব ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্যরা বর্ণিল সাজে নেচে-গেয়ে তুলে ধরেন তাদের নান্দনিক ও বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি। পাশাপাশি অনুষ্ঠিত হয় বিয়ে ও কারাম গীতের সুর, দাশাই নৃত্যের ছন্দ, আমলোবান ও ঝুমুর গানের প্রতিযোগিতা। রঙিন পোশাক, নাচ ও গানে মেলা প্রাঙ্গণ পরিণত হয় বৈচিত্র্যের রঙে আঁকা এক জীবন্ত ক্যানভাসে।

সিসিবিভিওর নির্বাহী প্রধান সারওয়ার-ই-কামাল বলেন, এই আয়োজনের মাধ্যমে তারা তাদের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য তুলে ধরছেন। এতে নতুন প্রজন্ম জানতে পারছে নিজেদের ইতিহাস, ভাষা, শিল্প ও সংস্কৃতি সম্পর্কে। এটি মূলত ঐতিহ্য সংরক্ষণের উৎসব।

শাহিনুল আশিক/এআরবি