শখের মাছের ঘেরে শত্রুতার বিষ, এক রাতেই সব শেষ
ছোটবেলা থেকেই মাছের প্রতি ছিল গভীর ভালোবাসা। সেই ভালোবাসাকে পুঁজি করে নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন বুনেছিলেন নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চর বৈশাখী গ্রামের মো. সিরাজ। দেড় একর জমিতে তিনটি ঘের করে পাঁচ বছর ধরে গলদা চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করছিলেন তিনি। কিন্তু দুর্বৃত্তের দেওয়া বিষে এক রাতেই শেষ হয়ে গেল তার পাঁচ বছরের পরিশ্রম ও স্বপ্ন।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় কে বা কারা তার ঘেরে বিষ প্রয়োগ করে। এতে প্রায় সাত লাখ টাকার মাছ মারা গেছে বলে দাবি করেছেন সিরাজ। তিনি চর ওয়াপদা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত মো. মোস্তফার ছেলে।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, বাড়ির পাশে মায়ের নামে সিরাজ গড়ে তুলেছিলেন ‘নুরজাহান পোল্ট্রি অ্যান্ড মৎস্য প্রজেক্ট’। বিকেলে নিয়ম মতো মাছের খাবার দেওয়ার পর সন্ধ্যায় ঘের পরিদর্শনে গিয়ে তিনি দেখেন, পানিতে বড় মাছগুলো ছটফট করছে এবং ছোট মাছগুলো মরে ভেসে উঠছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুরো ঘেরজুড়ে মৃত মাছের স্তূপ তৈরি হয়।
ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তারা বলেন, এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় শুধু একজন মানুষ নয়, পুরো এলাকার সুনাম ও সম্ভাবনা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারা প্রশাসনের কাছে দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে দেখা যায়, ঘেরের চার পাশে ছড়িয়ে আছে শত শত মৃত মাছ। দুর্গন্ধে ছড়িয়ে পড়েছে। হতাশ সিরাজ জাল দিয়ে মাছগুলো তুলে গর্ত করে পুঁতে ফেলছেন। কিছু ভালো মাছ স্থানীয় দরিদ্র মানুষ বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন।
মৎস্য চাষি মো. সিরাজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১৯৯৮ সালে বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে আমি সংগ্রাম করে জীবন গড়ার চেষ্টা করছি। ছোটবেলার শখ ছিল মাছ চাষ করার। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে গত পাঁচ বছর ধরে পরিশ্রম করেছি। কিন্তু একদিনে সব শেষ হয়ে গেল। ঘেরে সিসি ক্যামেরা বসানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, ঠিক তার আগের দিনই বিষ প্রয়োগে আমার সব শেষ করে দেওয়া হলো। কারও সঙ্গে আমার কোনো শত্রুতা নেই, জানি না কে বা কারা এটা করলো।
চরজব্বর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ বিষয়ে অভিযোগ অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাবেয়া আসফার সায়মা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনাটি সত্যিই দুঃখজনক। ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষিকে আমরা আইনগত সহায়তা দেব। তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
হাসিব আল আমিন/আরএআর