অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে পদ্মা-মহানন্দা নদীর ভাঙন রোধ সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ও সাবেক ভিপি মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল। তিনি বলেন, প্রশাসন যতটুকু বালু উত্তোলনের অনুমতি দেয়, তার চেয়ে বেশি উত্তোলন করা সম্পূর্ণ অবৈধ। প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া অতিরিক্ত বালু তুলেই বালুখেকোরা পদ্মা-মহানন্দাকে বিপর্যস্ত করে তুলছে। অথচ তারাই আবার নদী রক্ষার আন্দোলন করছে। কারা বালুমহাল দখল করে রেখেছে, কারা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ তা জানে এবং চোখে দেখে।

শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার হরিপুর বোর্ড ঘরে ভোট কেন্দ্র প্রতিনিধি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

যারা আজ পদ্মা-তিস্তার পানির হিস্যা নিয়ে আন্দোলন করছে, তারা ক্ষমতায় থাকাকালীন কী করেছে এ প্রশ্ন রেখে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ক্ষমতায় থাকার সময় তারা দেশকে দুর্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়নে পরিণত করেছিল। একবার-দুবার নয়, টানা পাঁচ বছরই তারা দুর্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ছিল। এখন যদি তারা আবার ক্ষমতায় ফেরার সুযোগ পায়, তবে দেশকে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করবে। ৫ আগস্টের পর তাদের কার্যক্রমেই বিষয়টি পরিষ্কার। তারা দেশে শান্তি চায় না, বরং লুটপাট, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, খুন-গুমের রাজনীতি চায়। জনগণ আর কাউকে সেই সুযোগ দেবে না।

তিনি আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে জাতি পাবে এক নতুন বাংলাদেশ, যেখানে থাকবে না কোনো বৈষম্য, প্রতিহিংসা বা রক্তপাত। প্রতিটি মানুষের নিরাপত্তা ও অধিকার রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরাও তাদের নাগরিক ও সাংবিধানিক অধিকার পুরোপুরি পাবে যে অধিকার থেকে তারা স্বাধীনতার পর গত ৫৪ বছর বঞ্চিত হয়েছে। নারীদের জন্য নিরাপদ কর্মক্ষেত্র গড়ে তোলা হবে। নারীর স্বাধীনতার নামে নারী-শিশু নির্যাতন চিরতরে বন্ধে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা রাষ্ট্র নেবে। ইসলাম নারীদের যে মর্যাদা, অধিকার ও স্বাধীনতা দিয়েছে তা রাষ্ট্রীয়ভাবে নিশ্চিত করা হবে।

নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জামায়াতে ইসলামী কোনো ব্যক্তি বা পরিবারের স্বার্থে নয়, বরং জনগণের কল্যাণে রাজনীতি করে। তারা জাতিকে একটি কল্যাণ ও মানবিক বাংলাদেশ উপহার দিতে চায়। এজন্য জনগণকে আগামী নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর হাতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দিতে হবে। তবেই ক্ষুধা, দারিদ্র্য, বেকারত্ব, দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজিমুক্ত একটি নতুন বাংলাদেশ পাওয়া সম্ভব হবে। তিনি বলেন, অতীতে যারা ক্ষমতায় ছিল, তাদের কোনো দলই বলতে পারবে না যে তারা দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজিমুক্ত দেশ দিতে পেরেছে। কারণ যাদের নেতৃত্বই দুর্নীতিগ্রস্ত এবং যারা সন্ত্রাস-চাঁদাবাজির গডফাদার, তারা কখনোই এমন বাংলাদেশ গড়তে পারে না। তিনি আরও বলেন, যাদের কাছে নিজেদের দলের নেতাকর্মীরাই নিরাপদ নয়, তাদের কাছে দেশ-জাতি নিরাপদ থাকতে পারে না। তারা নিজের দলের মানুষকেও খুন করেছে। এমনকি নিকৃষ্টভাবে হত্যার সংস্কৃতি চালু করেছে। আওয়ামী লীগ মানুষকে লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে; আরেকটি দল চাঁদা না পেয়ে মানুষকে পাথর দিয়ে থেঁতলে হত্যা করেছে যে দৃশ্য বিশ্বকেই কাঁদিয়েছে। এরা ক্ষমতায় এলে অসংখ্য মা সন্তানহারা হবে, হাজারো বোন স্বামী হারাবে, শিশুরা পিতৃহারা হবে এবং বোনেরা ভাই হারাবে। তাই নিরাপদ ও বাসযোগ্য নতুন বাংলাদেশ গড়তে তাদেরকে ব্যালটের মাধ্যমে বয়কট করতে হবে। বাংলাদেশকে শান্তির নীড়ে পরিণত করতে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে ভোট দিয়ে ইসলামী বিপ্লব ঘটানোর আহ্বান জানান তিনি।

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে যুবকদের জন্য নৈতিক মোটিভেশনাল প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে জানিয়ে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, যুবকদের হাতে অস্ত্র ও মাদক নয়, হাতে থাকবে কলম। নৈতিক ও আদর্শিক শিক্ষায় গড়ে উঠে তারা জাতির নেতৃত্ব দেবে। বেকারত্ব দূর করতে যুব সমাজকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা হবে। নারী-পুরুষ যুবকদের কর্মমুখী প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রত্যেককে জাতীয় সম্পদে পরিণত করা হবে। তিনি নির্বাচিত হলে চাঁপাইনবাবগঞ্জে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় ভিলেজ পলিটিক্স বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। প্রতিটি মানুষ ঘরে বসেই উপার্জনের সুযোগ পাবে। শহর ও গ্রামকে সমানভাবে উন্নত করা হবে। কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের কল্যাণে সব বৈষম্যের শিকল ভেঙে দলমত, ধর্ম-বর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। বিদেশগামীদের প্রতারণা থেকে রক্ষা করতে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় পদক্ষেপ নেওয়া হবে যাতে কেউ বিদেশ যেতে অগ্রিম টাকা দিয়ে প্রতারিত না হয়। বিদেশে যেতে না পারলে টাকা অটোমেটিকভাবে ফেরত পাওয়া যাবে। মহানন্দা ও পদ্মা নদীর ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে সেখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। বিশুদ্ধ পানির সংকট দূর করা হবে। ছাত্র ও যুব সমাজের নেতৃত্বে চাঁপাইনবাবগঞ্জকে নতুন বাংলাদেশের রোল মডেল হিসেবে গড়ে তোলা হবে। নতুন চাঁপাইনবাবগঞ্জ গড়তে দলমত, ধর্ম-বর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

হরিপুর বোর্ড ঘর সেন্টারের সভাপতি আলহাজ্ব মো. রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক লতিফুর রহমান, জেলা নায়েবে আমির ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোখলেশুর রহমান, জেলা সহকারী সেক্রেটারি ও সাবেক প্যানেল মেয়র অধ্যাপক আবুল হাসান এবং পৌর আমির হাফেজ গোলাম রাব্বানী। এছাড়াও জেলা ও সদর উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

আশিক আলী/এআরবি