বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, সচিবদের দায়িত্ব কমিয়ে আনা হবে। পলিসি মেকিং করা সচিবদের কাজ নয়। রাজনীতিবিদরা পলিসি মেকিং করবেন এবং সচিব বা সরকারি কর্মকর্তাদের কাজ তার বাস্তবায়ন করা। তবে এ বাস্তবায়নের জন্য আনলিমিটেড সময় দেওয়া হবে না। কাজ বাস্তবায়ন করতে হবে বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে। যারা তা করতে পারবেন না, তাদের সেখানে থাকার দরকার নেই।

শনিবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে বিএনপির ফরিদপুর সাংগঠনিক বিভাগের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেওয়ার পর ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। ফরিদপুর সদর উপজেলা অডিটোরিয়ামে এ সভার আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ফরিদপুর বিভাগ ব্যবসায়ী ফোরামের সমন্বয়কারী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যেখানেই যত নিয়ন্ত্রণ, সেখানেই তত করাপশন। ঘুষ–দুর্নীতি কমিয়ে আনতে এবং ব্যবসাকে সহজ করতে সনদের সংখ্যা কমানো, পরিবেশ সৃষ্টি করা, ক্যাপিটাল মার্কেট সৃষ্টি করার কাজ করা হবে। ব্যাংক ঋণের হার ১৫ ভাগ হলে ব্যবসায়ীর পক্ষে ব্যবসা করা সম্ভব নয় । 

তিনি বলেন, আগামীতে আমাদের অর্থনীতি ও রাজনীতি এমনভাবে ঢেলে সাজাতে চাই, যাতে আমরা জনগণকে ক্ষমতায় দেখতে পাই। সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চাই না। তাহলে দেশ পিছিয়ে পড়বে।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিগত সরকারের সময়ে দেশে পৃষ্ঠপোষকতার অর্থনীতি চালু ছিল, তাতে অল্প কয়েকজন লোক উপকৃত হয়েছে। অর্থনীতিতে গণতন্ত্র ছিল না, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছিল না। এ জন্য অনেক ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার মূল কারণ অনুসন্ধান করে সংকটের গভীরে গিয়ে সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। 

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাকে উন্নত করতে হবে, তা না হলে দেশের কাঙ্ক্ষিত উন্নতি হবে না। আগামীতে এমন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে চলমান গণতন্ত্রের পাশাপাশি চলমান অর্থনীতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। উন্নয়নের সুফল যাতে প্রতিটি জনগণ পায় সে দিকে নজর দিতে হবে।

মতবিনিময় সভায় প্রশ্নোত্তর পর্ব রাখার বিষয়ে আমীর খসরু বলেন, ফ্যাসিস্ট পালিয়ে যাওয়ার পর মানুষের মনোজগতে পরিবর্তন এসেছে। এ পরিবর্তনের ধারা বুঝতে না পারলে রাজনীতির ভবিষ্যৎ নেই। এজন্য এই প্রশ্নোত্তর পর্ব রাখা হয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা চাকরির ইন্টারভিউ দিচ্ছি আর আপনারা আমাদের চাকরি দেবেন— এ লক্ষেই এই আয়োজন।

তিনি বলেন, আগে রাজনীতিবিদরা চাইতেন ব্যবসায়ীরা-জনগণ তাদের কাছে আসুক। কিন্তু আমরা সে অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে চাইছি। এজন্য বিএনপির বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এ বিভাগীয় মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছি। আমরা রুট লেভেলে যাচ্ছি, ব্যবসায়ীদের চাওয়া–পাওয়ার খোঁজখবর নিতে।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দেড় বছরের মধ্যে এক কোটি লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে। রেস্টুরেন্ট ব্যবসা করতে এখন যে ১৯টি সনদ লাগে এবং তা পেতে এক থেকে দেড় বছর সময় লাগে— তা কমিয়ে সরকারি পারমিশন যাতে ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে পাওয়া যায় সে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এ মতবিনিময় সভায় বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলের পাঁচটি জেলা— ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী জেলার শীর্ষ ব্যবসায়ীরা অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হক, করিম গ্রুপের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর মিয়া, বিএস জুট মিলের মালিক জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ ফ্যাকাল্টির অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ রাশেদ আল মাহমুদ, ফরিদপুর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি আওলাদ হোসেন, মাদারীপুর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি লোকমান হোসেন, রাজবাড়ী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ইনামুল করিম, শরীয়তপুর চেম্বার অব কমার্সের সহসভাপতি আলাউদ্দিন আল আজাদ, মামুন গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহিন শাহাবুদ্দিন, ফরিদপুর জুট ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান চৌধুরী ফারিয়ান ইউসুফ, ফরিদপুর চক বাজার বণিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি একে এম কিবরিয়া প্রমুখ।

জহির হোসেন/আরএআর