করোনার কারণে অন্যান্য ব্যবসায় লোকসানের মুখ দেখছিলেন স্বপন মিয়া। তাই লাভের আশায় শুরু করেন হাঁস পালন। ঋণ করে ১২০০ হাঁসের বাচ্চা কিনে দেন খামার। খামারে দ্রুত বেড়েও উঠছিল হাঁসগুলো। তবে দুই মাসের মাথাতেই স্বপ্নভঙ্গ হয় স্বপনের। খামারে দেখা দেওয়া মড়কে চারদিনে তার এক হাজার হাঁস মারা গেছে। এতে পথে বসার উপক্রম হয়েছে এ যুবকের। 

স্বপন মিয়ার বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুরের মাওহা ইউনিয়নের নয়ানগর বাউশালী পাড়া গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের আবুল হাশেমের ছেলে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিন মাস আগে হাঁসের খামার দেওয়ার জন্য একটি এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন স্বপন। বাড়ির পাশে সুরিয়া নদীর পাড়ে মাচা ও নেটের বেড়া দিয়ে তৈরি করেন খামার। এরপর কেন্দুয়া উপজেলার রামপুর থেকে ৩৬ হাজার টাকায় ১২০০ হাঁসের বাচ্চা কিনে লালন-পালন শুরু করেন। 

দুই মাস পরিচর্যায় খামারের হাঁসগুলো দ্রুত বেড়ে উঠতে থাকে। কিন্তু গত শনিবার থেকে খামারের হাঁসগুলো খিচুনি দিয়ে মারা যেতে শুরু করে। এরপর কয়েক দিনেই মারা গেছে প্রায় এক হাজার হাঁস। এ ঘটনায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন স্বপন। 

স্বপন মিয়া বলেন, মড়ক দেখা দেওয়ার পর পার্শ্ববর্তী উপজেলা থেকে ওষুধ এনে প্রয়োগ করেও হাঁস বাঁচাতে পারিনি। মড়কে দেড় লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। খামারের কর্মচারীর দুই মাসের বেতন বাকি রয়েছে। প্রতি মাসে কিস্তি ৩৫০০ টাকা দিতে হচ্ছে। এখন কি খাব, কিভাবে ঋণ পরিশোধ করব, কিছুই বুঝতে পারছি না। 

ওই গ্রামের বাসিন্দা আজহারুল করিম বলেন, হাঁসের শোকে স্বপন মিয়া দিশেহারা হয়ে গেছে। এখানে-সেখানে বসে কান্নাকাটি করছে। তার এই দুর্দিনে প্রশাসন ও হৃদয়বানরা সহযোগিতা করলে সে হয়তো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুল করিম বলেন, চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ না করে এবং সঠিক নিয়ম-নীতি না জেনে হাঁস পালন করায় অনেক সময় রোগাক্রান্ত হয়ে হাঁস মারা যায়। স্বপন যদি আমাদের পরামর্শ নিয়ে হাঁস পালন করতেন তাহলে হয়ত এই ক্ষতি হতো না। আর খামারের হাঁস কি কারণে মারা যাচ্ছে সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে বলে যাবে না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসান মারুফ বলেন, এমন ঘটনা সত্যিই খারাপ লাগার মতো। স্বপনের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে তাকে সহযোগিতা করা হবে। পাশাপাশি সে যেন ঘুরে দাঁড়াতে পারে সেজন্য তাকে ঋণ দেওয়ারও চেষ্টা করা হবে। 

উবায়দুল হক/এসপি