বাড়িতে তখন তার বিয়ের কথা চলছিল। চার বোন মিলে একই রঙের শাড়ি পরবে- এ ছিল নাছিমার ইচ্ছে। কিন্তু সেই শাড়ি আর কেনা হলো না নাছিমার। ঢাকার সায়েন্স ল্যাবের আকাশে উড়তে থাকা একটি হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলিতে শেষ হয়ে যায় নাছিমা আক্তারের (২৪) জীবন। 

নিহত নাছিমা আক্তার নোয়াখালীর সুধারাম মডেল থানার মাইজদী বাজার এলাকার মৃত ইউছুপ মিয়ার মেয়ে। 

মানবতাবিরোধী অপরাধে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর নাছিমার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে এক ধরনের স্বস্তি ফিরলেও কার্যকর হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।

জানা গেছে, ২০২৪ সালে ১৯ জুলাই বিকেলে ধানমন্ডি ১ নম্বর রোডের একটি ১০ তলা ভবনের ছাদে ছিলেন নাছিমা ও ভাতিজা আইমান। এমন সময় আকাশে হেলিকপ্টার ও ড্রোন দেখা যায়। হঠাৎ হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া একটি গুলি- প্রথমে আইমানের বুক, তারপর সেই গুলিই নাছিমার মুখ ভেদ করে গলায় আটকে যায়। হাসপাতালের বারান্দায় দাঁড়িয়ে অসহায় পরিবারের শুধু তাকিয়ে দেখা ছাড়া কিছু করার ছিল না। পরদিন রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাছিমা চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

নাছিমার ভগ্নিপতি প্রকৌশলী আব্দুল আলীম ঢাকা পোস্টকে বলেন, রায়ে সান্ত্বনা আছে। কিন্তু রায় কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত আমাদের শান্তি নেই। আমার শালিকাকে মেরে ফেলল তার বিচার না হলে এ দেশের মানুষ কিভাবে নিরাপদ হবে? জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করে শহীদ পরিবারগুলোকে সম্মান দিন। ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দিন। চোখের পানি যেন মূল্যহীন না হয়।

নাছিমার বোন কোহিনুর হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, নাছিমা ছিল শান্ত, ভালো মেয়ে। তাকে আকাশ থেকে গুলি করে হত্যা, এটা মানবতাবিরোধী অপরাধ। আমার বোন তো আর ফিরবে না শুধু চাই, যার নির্দেশে গুলি চলেছিল তাকে দেশে এনে শাস্তি দেওয়া হোক।

ভাগনি ফাতেমা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার খালামনি আমাকে নিয়ে ছাদে যেতেন, খেলতেন। অনেক আনন্দের সময় কাটিয়েছি উনার সঙ্গে। উনার কথা মনে হলে আমার কান্না আসে। আমি কিছু বুঝি না। আমার খালা মনিকে ফিরে পেতে চাই।

নাছিমার বড় ভাই হেলাল উদ্দিন সোলায়মান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বোন ও আমার ছেলের চিকিৎসায় ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আজও আমরা সরকারি সুযোগ সুবিধার আওতায় আসতে পারি নাই। বৈষম্য দূর হোক এটা আমার কামনা। প্রধান উপদেষ্টার কাছে আমার অনুরোধ স্বৈরাচারকে দেশে এনে রায় কার্যকর করুন।

হাসিব আল আমিন/আরকে