গুলিতে নিহত ছাত্রদল নেতা
স্বজনদের অভিযোগ প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে পরিকল্পিত হত্যা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কান্দিপাড়া এলাকায় গভীর রাতে গুলিতে নিহত সাবেক ছাত্রদল নেতা সাদ্দাম হোসেনের (৩৫) মৃত্যুর ঘটনা নতুন দিকে মোড় নিতে শুরু করেছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আগের সংঘর্ষ ও গুলিবর্ষণের পর মধ্যরাতে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতা তাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেছেন এমন অভিযোগ তুলেছেন স্বজনেরা। তবে অভিযুক্ত নেতা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) দিবাগত রাত আনুমানিক দুইটার দিকে কান্দিপাড়া এলাকা থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সাদ্দামকে উদ্ধার করা হয়। পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বিজ্ঞাপন
নিহত সাদ্দাম সদর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সদস্য এবং কান্দিপাড়ার মাইমলহাটি এলাকার বাসিন্দা। তিনি স্ত্রী, সাত ও দুই বছর বয়সী দুই কন্যাসন্তান রেখে গেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, এর আগের দিন সন্ধ্যায় কান্দিপাড়া এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন এবং সদর উপজেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাকিল সিকদারের অনুসারীদের মধ্যে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এতে তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকায় চিকিৎসাধীন আছেন।
বিজ্ঞাপন
নিহতের বাবা মোস্তফা কামাল অভিযোগ করে বলেন, রাত দেড়টার দিকে আমার ছেলে বাড়িতে খাবার খাচ্ছিল। তখন দেলোয়ার হোসেন দিলীপ, পলাশ ও বাবুল তাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর খবর পাই সে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। গিয়ে দেখি তার বুকে গুলির চিহ্ন, গলায় ওড়না প্যাঁচানো। দিলীপের বিরোধী পক্ষকে ফাঁসাতে পরিকল্পিতভাবে আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে।
নিহতের স্ত্রী ফারজানা আক্তার বলেন, বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে স্বামী আমার সঙ্গেই ছিল। দিলীপ, পলাশ ও বাবুল তাকে ডেকে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরই খবর আসে, তাকে গুলি করা হয়েছে। এখন আমি দুই সন্তান নিয়ে অসহায়। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি জানাই।
অভিযুক্ত জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন দিলীপ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সাদ্দাম সবসময় আমার সঙ্গে থাকত। আমি কেন তাকে হত্যা করব? আমাদের ওপর পেছন দিক থেকে শাকিল ও তার লোকজন গুলি চালায়। আমরা পালিয়ে গেলে সাদ্দাম আক্রান্ত হয়। পরিবার কেন আমাকে দোষ দিচ্ছে, বুঝতে পারছি না।
এদিকে পরপর দুটি ঘটনার পরও আসামিরা এখনো পুলিশের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। সাদ্দামের মৃত্যুর পর কান্দিপাড়া এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। স্থানীয়দের উদ্বেগ কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে অবৈধ অস্ত্রের সহিংসতায় একজনের প্রাণ গেলেও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। আবার কবে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়বে এ নিয়ে সবাই আতঙ্কে। তাই দ্রুত প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজহারুল ইসলাম বলেন, সন্ধ্যার গুলির ঘটনার জের ধরেই মধ্যরাতে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। কে বা কারা জড়িত তা তদন্তে পরিষ্কার হবে। এখনো পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
মাজহারুল করিম অভি/এআরবি