জরাজীর্ণ বিদ্যালয়ের ভবনের দেয়ালে ফাটল, হঠাৎ ধসে পড়ছে ছাদের পলেস্তারা। এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি প্রায় দেড় বছর আগে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর থেকেই বিদ্যালয়ের প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীকে খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করানো হচ্ছে। এতে পড়ালেখার পরিবেশ ও মনোযোগ হারাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। 

রোববার (৩০ নভেম্বর) সকালে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের দক্ষিণ মেলাবর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়। 

কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৫ সালে বিদ্যালয়ের এক তলা একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের পর সেখানে তেমন কোনো সংস্কার করা হয়নি। এতে ভবনের দেয়াল ও ছাদের পলেস্তারা ধসে পড়তে শুরু করে। ভবনটিতে পাঠদান ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে বিদ্যালয়ের দুই শিফটের প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীকে রোদ, বৃষ্টি কিংবা শীত উপেক্ষা করে মাঠে বসে ক্লাস করতে হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সকালে শিক্ষার্থীরা এসে শ্রেণিকক্ষে বসার কথার থাকলেও বিদ্যালয়ের মাঠে বিছানো মাদুরে বসে ক্লাস করে তারা। জরাজীর্ণ ভবনে জীবন ঝুঁকির ভয়ে বসছে না শ্রেণিকক্ষে। কক্ষে ভাঙাচোরা-ময়লা হয়ে পড়ে আছে টেবিল-চেয়ার।   

তামিম নামে চতুর্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলেন, প্রত্যেক দিন স্কুলে আসার পর বাইরে বসে ক্লাস করতে হয়। বাড়ি থেকে গোসল করে ভালো কাপড় পরে আসলে এখানে এসে সব ময়লা হয়ে যায়। 

শিক্ষার্থী সালমা আক্তার বলেন, আমাদের এভাবে মাটিতে বসে ক্লাস করতে ভালো লাগে না। আমরা অনেকদিন ধরে ক্লাস রুমে ক্লাস করতে পারছি না।  

মহিউদ্দিন নামে এক অভিভাবক বলেন, আমার বাচ্চা বিদ্যালয়ে পড়ে কিন্তু এখানে এসে মাঠে ক্লাস করছে। শিক্ষার্থীরা মাঠে ক্লাস করার কারণে মনোযোগ হারাচ্ছে। 

শিক্ষিকা সুমি বেগম বলেন, ক্লাসরুমে পাঠদান করাতে পারছি না। সকালে বাচ্চারা এসে মাঠে বসে ক্লাস করে। আমরা শিক্ষকরা একটু গিয়ে অফিসে বসব সে অবস্থাও নেই। মাঠে বসে ক্লাস করায় শিক্ষার্থীরা মনোযোগ হারায়। তাদের জন্য দরকার মনোরম পরিবেশ।  

আরেক শিক্ষক হেলাল উদ্দিন বলেন, আমরা খুব কষ্টে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাচ্ছি। অন্য স্কুলে বরাদ্দ আসে, কাজ হয় সবকিছু হয় কিন্তু আমাদের স্কুলে ভবন সংস্কার না হওয়ায় আমরা খুব সমস্যায় আছি। 

মেলাবর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাক আহমেদ বলেন, আমরা খুব নাজুক অবস্থার মধ্যে আছি পাঠদানের কোন রকম পরিবেশ পাচ্ছি না। ভবনে ক্লাস নেওয়া যায় না বাধ্য হয়ে মাঠে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছি। বর্ষাকালে আমরা ক্লাস করাতে পারি না। আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আমরা এক বছর আগে জরুরি ভবন বরাদ্দের জন্য আবেদন করেছি কিন্তু এখনো হয়নি।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ড. মাহমুদা খাতুন বলেন, বিষয়টি আমি ভীষণ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। এডিপি বরাদ্দের জন্য চেষ্টা করছি। ইউএনওর সঙ্গে কথা বলে সেখানে আপাতত একটি টিনের চালার ব্যবস্থা করা হয়েছে যার কাজ সামনে মাসে শুরু হবে। সেখানে একটি ভবনের জন্য আবেদন করা হয়েছে আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে পাব।

আরকে