নিহত শ্যামাচরণের ভাই অভয় চরণ বর্মণ

সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার সুনই জলমহাল দখল নিয়ে প্রতিপক্ষের হামলায় এক জেলে নিহত হওয়ার ঘটনায় জলমহাল পাড়ের গ্রামগুলোতে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ফের সংঘর্ষের আশঙ্কায় সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) বিকেলে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিহত শ্যামাচরণ বর্মণের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (শুক্রবার বিকাল ৪টা) থানায় মামলা হয়নি। পুলিশ রাতেই জলমহালের আশপাশের এলাকা থেকে ২৩ জনকে আটক করেছে।

বুধবার রাতে জলমহালে মাছ ধরে রুখনের লোকজন। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন রুখন সুনই গ্রামের খায়রুল, সম্রাট, জুলহাস, তনুজসহ সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে জলমহালে এসে প্রথমেই খলার বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে খলা ঘেরাও করে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করেন। এ সময় অন্যরা দৌড়ে পালালেও তাদের সমিতির সভাপতি সুবির বর্মণের বাবা শ্যামাচরণ বর্মণ (৬৫) দৌড়ানোর সময় নিচে পড়ে যান। হামলাকারীরা রামদা দিয়ে তার গলা কেটে দেয়।

ঝন্টু বর্মণ, সাধারণ সম্পাদক, সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি

নিহত ব্যক্তির ভাই অভিযোগ করে জানান, স্থানীয় সাংসদের নির্দেশে এই হামলা ও খুনের ঘটনা ঘটেছে। সংসদ সদস্য বলেছেন, দুই মৎস্যজীবী সমিতির দ্বন্দ্ব, এখানে তাকে এবং তার ভাইকে যুক্ত করার চেষ্টা করছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ।

ধর্মপাশার বৃহৎ জলমহাল সুনই নিয়ে দুই মৎস্যজীবী সমিতির দ্বন্দ্ব চলছে অনেক দিন ধরে। জলমহালের খাজনা পরিশোধ করে দুই পক্ষই মহালের মালিকানা দাবি করে আসছে। একপক্ষ সম্প্রতি স্থানীয় সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন রতন তাদের মাছ আহরণে বাধা দিচ্ছেন দাবি করে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনও করেছিল।

এই দ্বন্দ্বের জের ধরে বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৮টায় জলমহালের পাড়ে থাকা একপক্ষের মাছের খলায় আরেকপক্ষ আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় প্রতিপক্ষের লোকজন শ্যামাচরণ বর্মণ নামের ৬৫ বছরের এক বৃদ্ধকে গলা কেটে হত্যা করে। এ ঘটনায় কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছে। পুলিশ রাতে ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ২৩ জনকে আটক করেছে।

সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ঝন্টু বর্মণ জানান, সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি ৬ বছর আগে উন্নয়ন স্কিমের আওতায় এই জলমহাল ইজারা পায়। গেল বছর (পঞ্চম বছর) হঠাৎ করেই স্থানীয় সাংসদের ভাই মোজাম্মেল হোসেন রুখন তাদের সমিতি থেকে বহিষ্কৃত সুবির বর্মণ নামের এক ব্যক্তিকে দিয়ে একই নামে আলাদা সমিতি করে জলমহালের মালিকানা দাবি করেন। এরপর থেকে তাদের নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। গেল বছর জেলা প্রশাসনের সহায়তায় মাছ আহরণ করেছেন তারা। এবার আড়াই মাস আগে জলমহালের এই বছরের খাজনা জমা দিয়েছেন এবং মাছ ধরার মৌসুমে জলমহালের একপাশে খলা (স্থাপনা) নির্মাণও করেছেন। অন্য পাশে মোজাম্মেল হোসেন রুখনও খলা তৈরি করান।

আমি ও আমার ভাই মোজাম্মেল হোসেন রুখন সুনামগঞ্জে ছিলাম। জলমহালে খুনের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। দুই মৎস্যজীবী সমিতির দ্বন্দ্ব চলছে। এখানে আমাকে ও আমার ভাইকে জড়ানোর চেষ্টা করছে আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। আমি এসব কিছুই জানি না। এসব অবান্তর কথা।

মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সাংসদ

ঝন্টু বর্মণ আরও জানান, বুধবার রাতে জলমহালে মাছ ধরে রুখনের লোকজন। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন রুখন সুনই গ্রামের খায়রুল, সম্রাট, জুলহাস, তনুজসহ সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে জলমহালে এসে প্রথমেই খলার বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে খলা ঘেরাও করে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করেন। এ সময় অন্যরা দৌড়ে পালালেও তাদের সমিতির সভাপতি সুবির বর্মণের বাবা শ্যামাচরণ বর্মণ (৬৫) দৌড়ানোর সময় নিচে পড়ে যান। হামলাকারীরা রামদা দিয়ে তার গলা কেটে দেয়।

শ্যামাচরণের ভাই অভয় চরণ বর্মণ দাবি করেন, স্থানীয় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন রুখন সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে খলায় হামলা করে আগুন দিয়েছেন। তার ভাইকে গলা কেটে হত্যা করেছেন।

সুনই গ্রামের খোকন খান বললেন, মোজাম্মেল হোসেন রুখন দিনে সুনামগঞ্জে ছিলেন, সন্ধ্যার পর সশস্ত্র বাহিনীসহ সুনইয়ে এসে জলমহালের খলায় হামলা করেন।

এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন রুখনের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা যায়নি।

তবে সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ও আমার ভাই মোজাম্মেল হোসেন রুখন সুনামগঞ্জে ছিলাম। জলমহালে খুনের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। দুই মৎস্যজীবী সমিতির দ্বন্দ্ব চলছে। এখানে আমাকে ও আমার ভাইকে জড়ানোর চেষ্টা করছে আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। আমি এসব কিছুই জানি না। এসব অবান্তর কথা।

দুই পক্ষই ওখানে মাছ ধরার জন্য স্থাপনা (খলা) নির্মাণ করেছে। চন্দন বর্মণের পক্ষ উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ পায়। জলমহালে অন্য পক্ষের লোকজনও দখলে ছিল। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওখানকার স্থাপনা উচ্ছেদ করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিলেও তিনি নির্দেশ প্রতিপালন করেননি। বিষয়টি বারবার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এই অবস্থায় সুবীর বর্মণের লোকজন অন্যপক্ষের স্থাপনায় হামলা করেছে। এ সময় চন্দন বর্মণের বাবা শ্যামাচরণ বর্মণ খুন হয়েছেন। হামলাকারীদের সঙ্গে স্থানীয় সাংসদের ভাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন রুখন ছিলেন বলে জানা গেছে।

মো. মিজানুর রহমান, পুলিশ সুপার

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হায়াতুন নবী শুক্রবার বিকালে জানান, জলমহালের দখল নিয়ে দুই সমিতির দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছে। এর জের ধরে বৃহস্পতিবার রাতে প্রতিপক্ষের হামলায় একজন মারা গেছেন। কয়েকজন আহত হয়েছেন। পুলিশ ২৩ জনকে আটক করেছে। শুক্রবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত কেউ মামলা করতে আসেনি।

সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান ঢাকা পোস্টকে জানান, জলমহালটির ইজারা নিয়ে স্থানীয় দুটি মৎস্যজীবী সমিতির দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছে। দুই মৎস্যজীবী সমিতির নেতা চন্দন বর্মণ ও সুবীর বর্মণ মহালের খাজনা জমা দিয়ে রশিদ দেখিয়ে জলমহালের দখল নিতে চাইলে জেলা প্রশাসন কাউকেই দখল বুঝিয়ে দেয়নি।

কিন্তু দুই পক্ষই ওখানে মাছ ধরার জন্য স্থাপনা (খলা) নির্মাণ করেছে। চন্দন বর্মণের পক্ষ উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ পায়। জলমহালে অন্য পক্ষের লোকজনও দখলে ছিল। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওখানকার স্থাপনা উচ্ছেদ করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিলেও তিনি নির্দেশ প্রতিপালন করেননি। বিষয়টি বারবার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এই অবস্থায় সুবীর বর্মণের লোকজন অন্যপক্ষের স্থাপনায় হামলা করেছে। এ সময় চন্দন বর্মণের বাবা শ্যামাচরণ বর্মণ খুন হয়েছেন।

হামলাকারীদের সঙ্গে স্থানীয় সাংসদের ভাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন রুখন ছিলেন বলে জানা গেছে, জানান পুলিশ সুপার।

এনএ