স্বামীকে সরাতে প্রেমিককে নিয়ে খুনের পরিকল্পনা সাজান স্ত্রী
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় পরকীয়ার জেরে নির্মমভাবে খুন হন সুমন খলিফা (৩৫)। পরিকল্পিত এ হত্যাকাণ্ডের নাটকীয় রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্কের জেরে সুমনকে হত্যা করা হয়।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান মুন্সী তার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বর্ণনা দেন।
বিজ্ঞাপন
পুলিশ সুপার বলেন, এটি সম্পূর্ণ পরিকল্পিত, সুসংগঠিত ও পূর্বনির্ধারিত হত্যাকাণ্ড। পরকীয়া সম্পর্কের জেরেই প্রেমিক ইউসুফ সুমন খলিফাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় এবং ওই পরিকল্পনায় আরও কয়েকজনকে যুক্ত করে।
তিনি জানান, গত ৩০ নভেম্বর রাতে স্ত্রী সোনিয়াকে নিয়ে পঞ্চবটি অ্যাডভেঞ্চার পার্কের সামনে একটি ক্লাবে গান গাইতে যান সুমন খলিফা। রাত ১১টার দিকে তিনি ক্লাবের বাইরে বের হওয়ার পর আর ফিরে আসেননি।
বিজ্ঞাপন
পরদিন সকালে চর কাশিপুর মধ্য নরসিংহপুর এলাকায় রাস্তার পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় তার মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। মাথা, গলা ও শরীরজুড়ে ছিলো অসংখ্য ক্ষত।
পুলিশ সুপার জানান, অভাবের সংসারে ক্লাবে গান গেয়ে আয় করতেন সোনিয়া আক্তার (২২)। দুই মাস আগে গান গাইতে গিয়ে তার পরিচয় হয় ইউসুফের (৪২) সঙ্গে এবং প্রেমের সম্পর্কের শুরু হয়। বিষয়টি টের পেয়ে যান স্বামী সুমন, ফলে দাম্পত্যে কলহ সৃষ্টি হয়।
পুলিশ সুপার বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদে ইউসুফ স্বীকার করেছে সুমন তাদের সম্পর্কে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাই তাকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য কয়েক দফা বৈঠক করে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়।”
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ৩০ নভেম্বর রাত ১০টার দিকে জালকুড়িতে বসে শেষ বৈঠক করে ইউসুফ, তার শ্যালক আব্দুর রহমান, মামুন (পলাতক), বিল্লাল হোসেন, আলমগীর হাওলাদার ও নান্নু মিয়া। রাত ১১টার দিকে দুই অটোরিকশায় করে তারা পৌঁছায় ক্লাবের সামনে। পরিকল্পনা অনুযায়ী মামুন ভেতরে গিয়ে গান চলাকালে সুমনকে ডেকে আনে ‘টাকা দেওয়ার কথা’ বলে।
সুমনকে অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যাওয়া হয় মধ্য নরসিংহপুরের নির্জন স্থানে। সেখানে আব্দুর রহমান সুইচ গিয়ার দিয়ে সুমনের মাথা ও শরীরে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। পালাতে চাইলে ইউসুফ ও বিল্লাল তাকে ধরে ফেলে দেয়। এরপর মামুন চাপাতি দিয়ে গলায় ও শরীরে একাধিক আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। হত্যার পর অস্ত্রগুলো পাশের ডোবায় ফেলে তারা পালিয়ে যায়।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানায়, সোনিয়া ও ইউসুফের মোবাইল ফোনের কল লিস্ট থেকেই প্রথম সন্দেহ তৈরি হয়। পরে প্রযুক্তির সহায়তায় ইউসুফকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একে একে অন্যরা ধরা পড়ে।
পুলিশ সুপার জানান, এ ঘটনায় মেহেদী হাসান ওরফে ইউসুফ (৪২), আব্দুর রহমান (২৮), বিল্লাল হোসেন (৫৮), আলমগীর হাওলাদার (৪৫), নান্নু মিয়া (৫৫), নিহত সুমনের স্ত্রী সোনিয়া আক্তার (২২) গ্রেপ্তার হয়েছে। এছাড়া পলাতক রয়েছে মামুন, যার হাতে ছিল মূল অস্ত্র চাপাতি। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে একটি চাপাতি ও একটি সুইচ গিয়ার। মামুনকে গ্রেপ্তারের জন্য বিশেষ অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সিনিয়র এ কর্মকর্তা।
মেহেদী হাসান সৈকত/আরকে