‎পাবনার ঈশ্বরদীতে আটটি কুকুরছানাকে বস্তাবন্দি করে পুকুরে ডুবিয়ে হত্যার পর দেশব্যাপী আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়। পরে এ ঘটনায় মামলা হলে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরপর ওই মা কুকুরকে দুইটি কুকুরছানা দিয়েছে ‎ঈশ্বরদীয়ান নামে এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

‎বুধবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে ঈশ্বরদীয়ান স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে দুটি কুকুরছানা মা কুকুরকে উপহার দেওয়া হয়। তাৎক্ষণিক মা কুকুরটি ছানাগুলোকে কাছে টেনে নেয় এবং দুধ সেবন করায় ছানাগুলোকে।

‎ঈশ্বরদীয়ান স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সভাপতি শাহরিয়ার অমিত বলেন, গত দুইদিন হল সন্তান হারিয়ে পাগলের মতো ছোটাছুটি করছেন মা কুকুরটি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন সংবাদ দেখে তাদের হৃদয়ে নাড়া দেয়। তাৎক্ষণিক তাদের নিজস্ব এলাকা থেকে দুটি কুকুরছানা এনে সন্তান হারানো মা কুকুরকে উপহার দেওয়া হয়।

‎তিনি আরও বলেন, মা কুকুরটি তাদের সন্তানকে দুধ খাওয়াতে না পেরে শারীরিক যন্ত্রণায় ভুগছিলেন, খুশির বিষয় হলো নতুন সন্তানকে পেয়ে মা কুকুরটি অনেকটাই আনন্দিত হয়েছে। তাই আদর করছেন ছানাগুলোকে, আর খাওয়াচ্ছেন বুকের দুধ৷

‎ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ঈশ্বরদীয়ান স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহযোগিতায় আটটি বাচ্চা হারানো মা কুকুরের জন্য দুটি বাচ্চা সংগ্রহ করা হয়েছে। কিছু সময় লাগলেও তাদেরকে আপন করে নিয়েছে। আশা করি বাচ্চা দুটি কিছুটা হলেও মা কুকুরটির শোক ভুলিয়ে দিতে পারবে।

‎প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনের এক কোনায় থাকে টম নামে একটি কুকুর। এক সপ্তাহ আগে টম আটটি বাচ্চা প্রসব করে। সোমবার সকাল থেকে তার ছানাগুলো না পেয়ে ছোটাছুটি করতে দেখা যায় মা কুকুর টমকে।

‎পরে উপজেলা পরিষদের কর্মচারীরা জানতে পারেন ঈশ্বরদী উপজেলা পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়ন ও তার স্ত্রী জীবন্ত আটটি কুকুর ছানাকে বস্তার মধ্যে ভরে রোববার রাতের কোনো এক সময় উপজেলা পরিষদের পুকুরে ফেলে দেন। একদিন পর সোমবার সকালে পাওয়া যায় কুকুর ছানাগুলোর মরদেহ। দুপুরের পর মৃত কুকুর ছানাগুলোকে ইউএনওর বাসভবনের পাশে মাটি চাপা দেওয়া হয়।

‎উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাড়ির কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সোমবার সকালে নয়ন স্যার মোটরসাইকেলে বাইরে যাচ্ছিলেন। আমি ছানাগুলোর কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি কিছু জানেন না বলে মন্তব্য করেন। তখন তার ছেলে বলে ‘আম্মু ছানাগুলোকে বস্তায় ভরে পুকুরে ফেলে দিয়েছে।’ এরপর আমরা পুকুরে গিয়ে একটি বস্তা ভাসতে দেখি। সেখান থেকে তুলে বস্তা খোলার পর আটটি ছানাকেই মৃত অবস্থায় পাই।

‎মৃত ছানাগুলো দেখে মা কুকুরটি প্রচণ্ড আর্তনাদ করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মীরা কুকুরটিকে চিকিৎসা দেন। মঙ্গলবার সারাদিন ছানাগুলোর খোঁজে মা কুকুরকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়সহ উপজেলা চত্বর এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। এ ঘটনায় দেশব্যাপী আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। 

এরপর মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আকলিমা খাতুন বাদী হয়ে নিশি রহমানকে আসামি করে থানায় একটি মামলাটি করেন। পরে রাত দেড়টার দিকে ঈশ্বরদী পৌর সদরের একটি ভাড়া বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। 

বুধবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তাকে ঈশ্বরদী থানা থেকে পাবনার আমলি আদালত-২ এ সোপর্দ করা হয়। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক তরিকুল ইসলাম তাকে কারাগারে পাঠানো নির্দেশ দেন। রোববার ৪ ডিসেম্বর শুনানির দিন ধার্য করেছে আদালত।

‎রাকিব হাসনাত/এমএন