পাবনায় ‎পেঁয়াজ আমদানির খবরে একদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম প্রায় অর্ধেক কমেছে। ভারত থেকে আমদানি হওয়ার খবর বাজারে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে পাইকারি হাটে মণপ্রতি দাম কমেছে ২ হাজার টাকা থেকে ২৫শ টাকার মতো। এতে ক্ষুব্ধ এ অঞ্চলের চাষিরা।

‎রোববার (৭ ডিসেম্বর) সুজানগরের ও আতাইকুলা পেঁয়াজ হাটে প্রতি মণ আগাম জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হয়েছে ২২০০ টাকা থেকে ২৬০০ টাকায়। আর পুরাতন হালি পেঁয়াজ ৩ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার ৩০০ টাকা পর্যন্ত।

‎আগের দিন শনিবার সাঁথিয়ার বনগ্রাম হাটে পাইকারিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ২০০ টাকা দাম ছিল। আর পুরাতন হালি পেঁয়াজের দাম ছিল ৫ হাজার ৫শ টাকা থেকে ৫ হাজার ৭শ টাকা পর্যন্ত।

‎সুজানগর হাটে পেঁয়াজ বিক্রি করতে আসা চরতারাপুর ইউনিয়নের আবজাল হোসেন বলেন, দুদিন আগেও মুড়িকাটা পেঁয়াজ ৩৮০০ টাকা থেকে শুরু করে ৪২০০ টাকা করে বিক্রি করেছি। আবার পুরাতন হালি পেঁয়াজ প্রায় ৬ হাজার টাকা করে বিক্রি হয়েছে। রোববার সকাল বাজারে পেঁয়াজ নিয়ে আসলে ব্যাপারীরা এমন ভাব দেখাল যে, পেঁয়াজ আজকে হয়ত বিক্রিই করতে পারব না। সব ব্যাপারীরা চুক্তি করে ২২০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা করে পেঁয়াজ কিনল। আমরা তো এ দাম দেখে হতাশ হয়েছি। আর দুদিন গেলে তো ১ হাজার টাকায় নেমে আসবে পেঁয়াজের বাজার।

‎এদিকে পেঁয়াজ আমদানির খবরে বাজারে ধস নামায় পাবনা সদরের চরতারাপুর ইউনিয়নের কলচরী, সুজানগরের ভবানীপুরের চরের কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, যে দামের সার, কীটনাশক ক্রয় করে পেঁয়াজ লাগানো হয়েছে এতে ৩ হাজার টাকা করে বাজার দর থাকলে তবেই লাভবান হওয়া যাবে। কিন্তু ২ হাজার টাকা বা তার থেকে কম বাজার দর পেলে লোকসানের মধ্যে পড়তে হবে।

কৃষকরা জানান, এক বিঘা মুরিকাটা পেঁয়াজ আবাদ করতে প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা খরচ পড়ে যায়। বিঘা প্রতি ৫০ মন করে পেঁয়াজ উত্তোলন করা যাচ্ছে। সার-কীটনাশক ও শ্রমিক খরচ বাদ দিলে কিছুই থাকে না। সরকারের উচিত হবে বাহিরের দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি না করার। পেঁয়াজ আমদানি করলে আমরা রোকসানের মধ্যে পড়ব। কৃষকরা পেঁয়াজ আবাদে আগ্রহ হারাবে।

‎লোকমান হোসেন নামের একজন কৃষক বলেন, যখনই কৃষক একটু পেঁয়াজের দাম পাওয়া শুরু করে তখনই সরকার বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে। পেঁয়াজ আমদানির খবর হাটে পৌঁছানোর আগেই বাজারে ধ্বস নামে৷ সরকার যদি পেঁয়াজের দাম নির্ধারন করে দেয় তাহলে কৃষকরা লাভবান হতে পারবে। তাছাড়া সিন্ডিকেট করে প্রকৃত কৃষকদের লাভের মুখ দেখা থেকে দূরে রাখবে।

‎কামাল হোসেন নামের আরেক কৃষক বলেন, ১০৫০ টাকা বস্তা সার আমরা ১৮০০ টাকা থেকে কিনে পেঁয়াজ লাগাচ্ছি। সারের বাজারে ব্যাপক সিন্ডিকেট। ডিলাররা কালোবাজারে সার বিক্রি করে দিচ্ছি। আমরা প্রকৃত কৃষকরা ন্যায্যমূল্যের সার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। বাধ্য হয়েই বেশি দাম দিয়ে কিনে পেঁয়াজ লাগাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, এবার লাভের আশায় হালি পেঁয়াজ রোপন করতেছি। সরকার যদি বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি না করে তাহলে আমরাও লাভবান হব। অধিক পরিমাণ পেঁয়াজ রোপণ করতে উৎসাহ পাব। আমাদের জেলায় যে পেঁয়াজ আবাদ হয় সারা দেশের চাহিদা মেটাতে পারবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক রাফিউল ইসলাম বলেন, সরকার মাঝে মধ্যে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে। এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু তার প্রভাব পাইকারি ও খুচরা বাজারে পড়ে, দাম কমে যায়। আবার অনেক সময় হাটবাজারে পেঁয়াজের আমদানিও বেড়ে যায়। এসব নানা কারণে পেঁয়াজের বাজার ওঠানামা করে। তবে কৃষক ২ হাজার টাকা থেকে ২ হাজার ২শ টাকা করে দাম পেলেও লাভবান হতে পারবে। এ দামটা কৃষকেরা পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। 

‎রাকিব হাসনাত/আরকে