মাদারীপুরে ক্লিনিকের ভেতরে বাথরুমে পাওয়া সেই নবজাতক কন্যা শিশু পেয়েছে বাবা-মায়ের পরিচয়। দত্তক নিয়েছেন সিঙ্গাপুর প্রবাসীর পরিবার। দাম্পত্য জীবন আনন্দময় করতে আবেদন জমা দিয়েছিলেন ৩৫ টি নিঃসন্তান দম্পতি। এর মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে তাকে নাদিম আকন ও সাদিয়া আক্তার দম্পতির কোলে তুলে দেন আদালত। নবজাতককে পেয়ে খুশি এই দম্পতি। তবে শর্ত অনুযায়ী দুই মাস পর পর শিশুটির শারিরিক অবস্থার খোঁজখবর নিয়ে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা জানিয়েছে সমাজসেবা অধিদপ্তর। দত্তক নেওয়া দম্পত্তি জেলা শহরের পাঠক কান্দি এলাকার বাসিন্দা।

হাসপাতাল ও আদালত সূত্রে জানা যায়, গত ২ ডিসেম্বর বিকেলে শহরের শকুনি লেকের দক্ষিণপাড়ের বাবু চৌধুরী জেনারেল হাসপাতালের বাথরুমে রক্তাক্ত অবস্থায় নবজাতক কন্যা শিশুকে ফেলে রেখে যায় অজ্ঞাত নারী। পরে শিশুটিকে দেখতে পান হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা কর্মী সাথী বেগম। এ সময় তাকে উদ্ধার করে তাৎক্ষণিক অক্সিজেন দিয়ে ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করে সমাজসেবা অধিদপ্তর। খবর পেয়ে হাসপাতালে উপস্থিত হন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা শাবাব এবং প্রাথমিকভাবে শিশুটির দায়িত্ব নেন তিনি। এদিকে বাবা-মায়ের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করতে থাকে পুলিশ।

এরমধ্যে শিশুটিকে দত্তক নিতে মাদারীপুর শিশু আদালতে আবেদন জমা দেয় ৩৫টি পরিবার। পরবর্তীতে সোমবার (৮ ডিসেম্বর) দিনব্যাপী শুনানী শেষে যাছাই-বাছাই করেন আদালতের বিচারক রিফাত মোল্লা। এ সময় সিঙ্গাপুর প্রবাসী নাদিম আকন ও সাদিয়া আক্তার দম্পতিকে দত্তক দেওয়ার সিদ্ধান নেন আদালত। তবে তাদেরকে সাড়ে তিন লাখ টাকা বন্ডসহ ৫টি শর্ত দেয়া হয়। এরপর মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেলে শিশুটিকে তাদের কোলে তুলে দেয় আদালত।

সিঙ্গাপুর প্রবাসী নাদিম আকন বলেন, সিঙ্গাপুর থেকে ছুটে এসেছি শুধুমাত্র শিশুটিকে দত্তক নেয়ার জন্য। আমাদের ঘরকে আলোকিত করার জন্য একটা সন্তান পেলাম। আমি মেয়েটিকে আদর-যত্ন-ভালবাসায় মানুষের মত মানুষ গড়ে তুলব। কোন কিছুর কমতি রাখব না। আমরা আজ অনেক খুশি। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি।

সাদিয়া আক্তার বলেন, এখন থেকে এই শিশুটি আমাদের সন্তান। মায়ের আদর-স্নেহ দিয়ে ওকে মানুষ করব। কোনো কষ্ট পেতে দেব না। সুখে-শান্তিতে আমাদের পরিবারে থাকবে। যত্নের কোন ত্রুটি হবে না। মায়ের মমতায় বেড়ে উঠবে।

মাদারীপুর সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন অফিসার শেখ নাহিয়ান ওয়াহিদ জানান, আদালত যাচাই-বাছাই শেষে এই দম্পতিকে যোগ্য মনে করেছেন এবং তাদের কাছে শিশুটিকে দত্তক দিয়েছেন। শিশুটির খোঁজখবর নিয়ে দুই মাস পর পর আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন। সমাজসেবা অধিদপ্তর এ বিষয়ে নিয়মিত তদারকি করবে।

আকাশ আহম্মেদ সোহেল/এমটিআই