মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান থেকে নতুন প্রজাতির ব্যাঙের সন্ধান পেয়েছেন একদল গবেষক। এতে করে বিশ্বে নতুন একটি ব্যাঙ আবিষ্কৃত হলো। ব্যাঙটি আবিষ্কার করেন বন্যপ্রাণী গবেষক মার্জান মারিয়া ও হাসান আল রাজী। গবেষকরা এই ব্যাঙের নাম দিয়েছেন ‘সিলেটের লাল চোখ ব্যাঙ’। এর ইংরেজি নাম Sylheti Litter Frog।

নতুন এই ব্যাঙের শরীরের রং ধূসর থেকে কালচে, শরীরে কালো ছোপ রয়েছে। এই রং তাদের ঝরা পাতার সঙ্গে মিশে থাকতে সাহায্য করে। এদের পেছনের পা তুলনামূলকভাবে ছোট। তাই খুব বেশি জোরে লাফাতে পারে না। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এদের চোখের ওপর অর্ধেক লাল রঙের যেখানে আলো পড়লে উজ্জ্বল প্রতিফলন তৈরি হয়।

গবেষক দল সূত্রে জানা যায়, নতুন প্রজাতির এই ব্যাঙ আবিষ্কারের আগে বাংলাদেশে মোট ৫৩ প্রজাতির ব্যাঙ ছিল। গবেষণার কাজটি রাশিয়া থেকে সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান ও সার্বিক সহযোগিতা করেছেন রাশিয়ান প্রফেসর Nick Poyarkov। গবেষণাপত্রটি বিখ্যাত Journal of Natural Historyতে ২৮ মে প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষক দলের সদস্য হাসান আল রাজী জানান, এই ব্যাঙটিকে Leptobrachium smithi মনে করা হতো। কিন্তু Leptobrachium smithi’র বিস্তৃতি বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে। এই বিস্তৃতির মাঝেই আরও দুটি এ ধরনের ব্যাঙ পাওয়া যায়। একটি Leptobrachium rakhinense অন্যটি Leptobrachium tenasserimense। 

এসব কিছু চিন্তা করে আমাদের মনে হয়, আমাদের দেশে Leptobrachium গণের যে প্রজাতিটি আছে সেটা আসলেই Leptobrachium Smithi হতে পারে না। এরই মাঝে আমাদের সঙ্গে রাশিয়ান প্রফেসর Nick Poyarkov এর যোগাযোগ হয়। তিনি আমাদের এই ব্যাঙ নিয়ে একই কথা ভাবছিলেন। আমরা তিনজন মিলে একটা গবেষণা পরিকল্পনা করে জুনে ফিল্ডের কাজ শুরু করি।

গবেষক দলের অপর সদস্য মার্জান মারিয়া জানান, এই ব্যাঙগুলো মূলত বনের ভেতরে পাওয়া যায়। বনের ঝরা পাতার মধ্যে ওরা থাকে। ঝরা পাতার মাঝে এরা এমনভাবে মিশে থাকে দেখলে বোঝার উপায় নেই যে এখানে কোনো ব্যাঙ আছে। তবে প্রজননের সময় এরা ঝরা পাতা ছেড়ে ছড়ায় নেমে আসে। ছড়ার প্রবাহমান স্বচ্ছ পানিতে এরা ডিম দেয়। ডিম ফুটে ব্যাঙাচিগুলো ছড়ার পানিতে বড় হয়। ঝরা পাতায় থাকে বলে এই ব্যাঙকে ইংরেজিতে Litter Frog বলে। তাই আমরা আমাদের এই ব্যাঙের ইংরেজি নাম দিয়েছি Sylheti Litter Frog (সিলেটের লাল চোখ ব্যাঙ)।

তিনি আরও জানান,  বাংলাদেশ থেকে নতুন কিছু আবিষ্কার করে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে পেরে আমরা গর্বিত। এটা ভেবেই ভালো লাগছে এই ব্যাঙের কথা যতবার স্মরণ করা হবে দেশের নামও ততবার নেওয়া হবে। ভবিষ্যতে এমন আরও কাজ করতে চাই।

তবে এই ব্যাঙ হুমকিতে আছে জানিয়ে গবেষক হাসান আল রাজী জানান, এই ব্যাঙ আবিষ্কার করতে পেরে অনেক আনন্দিত কিন্তু একইসঙ্গে দুঃখের খবর। কারণ জীববৈচিত্রে ভরপুর লাউয়াছড়া বন তার রূপ হারাচ্ছে। বনের যে ছড়াগুলোতে ব্যাঙ প্রজনন করে সেই ছড়াগুলোর বেশির ভাগ শুকিয়ে গেছে। এমনটা হতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে সিলেটের লাল চোখ ব্যাঙ আর লাউয়াছড়া বনে পাওয়া যাবে না। এই ব্যাঙগুলো সংরক্ষণের জন্য এই ছড়াগুলোকে আমাদের বাঁচাতে হবে।

ওমর ফারুক নাঈম/এসপি