প্রয়াত জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে এবং পিরোজপুর-১ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মাসুদ সাঈদী বলেছেন, আমাদের জুলাইয়ের যোদ্ধা ও এ দেশের সূর্যসন্তান হাদির ওপর হামলা হয়েছে। এই হামলা চালিয়েছে ভারতীয় আধিপত্যবাদীরা এবং ভারতের এ দেশের এজেন্ট আওয়ামী লীগের গুন্ডা-পাণ্ডারা। হাদির ওপর হামলা শুধু ব্যক্তি হাদির ওপর হামলা নয়, এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর হামলা।

তিনি বলেন, আমরা এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি- অনতিবিলম্বে হাদির ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে এবং প্রত্যেক জুলাই যোদ্ধাকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা যদি এই যোদ্ধাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে না পারি, তাহলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে আর কোনোদিন কোনো যোদ্ধা তৈরি হবে না। এবারের বিজয় দিবসে আমাদের অঙ্গীকার হোক- দেশ গড়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের শহীদদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করব।

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুরে বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পিরোজপুর পৌরসভা শাখার আয়োজনে বিজয় র‍্যালি শেষে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় পিরোজপুর শহরের সিও অফিস চত্বর থেকে জামায়াতে ইসলামী বিজয় র‍্যালি বের করে। র‍্যালিটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে টাউন ক্লাব সড়কে এসে শেষ হয়।

তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালে যে মহৎ উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল, যে সুখী ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিল- দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫৪ বছর পরেও আমরা সেই বাংলাদেশকে এখনো খুঁজে পাইনি। আমরা একটি শোষণ ও বৈষম্যহীন বাংলার স্বপ্ন দেখি। সেই শোষণ-বৈষম্যহীন বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন হয়েছে এবং ২০২৪ সালেও ওই নমরুদবিরোধী আন্দোলন সংঘটিত হয়েছে।

তিনি বলেন, এসব আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশে একটি সফল গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে। আমরা ভেবেছিলাম এবার বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, যে কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন ও লক্ষ্য নিয়ে এই গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছিল, সেই স্বপ্ন এখনো পূরণ করা সম্ভব হয়নি।

মাসুদ সাঈদী বলেন, দেশের মানুষ এখনো নানা ধরনের দুঃশাসন ও নিপীড়নের শিকার। আমরা এ অবস্থা থেকে মুক্তি চাই। আমরা চেয়েছি এই বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক। বাংলাদেশের মানুষ পৃথিবীর যেখানেই যাবে, সেখানেই গর্বভরে পরিচয় দেবে-আমরা বাংলাদেশি। ইনশাআল্লাহ, এই সুজলা-সুফলা বাংলাদেশ একদিন সুখী ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে।

তিনি বলেন, আমরা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের ঋণ এবং শহীদদের রক্তের ঋণ বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমেই পরিশোধ করতে চাই। আমরা একটি উন্নয়নশীল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই।

তিনি আরও বলেন, যারা শুধু মুখে স্বাধীনতার চেতনার কথা বলে, তারা তা অন্তরে ধারণ করে না। স্বাধীনতার চেতনা শুধু মুখে বললেই হবে না-আমাদের তা অন্তরে ধারণ করতে হবে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কোনো নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের কোনো থানায় চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, লুটপাট কিংবা অন্য কোনো অপরাধের মামলা কেউ দেখাতে পারবে না। এটাই স্বাধীনতার প্রকৃত চেতনা এবং প্রকৃত দেশপ্রেম। আমরা দেশপ্রেমিক শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ গড়তে চাই। এ কাজে সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ হতে পারি, তবেই আমরা একটি সুখী ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ অর্জন করতে পারব।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর পিরোজপুর জেলা শাখার আমির অধ্যক্ষ তাফাজ্জল হোসাইন ফরিদ, সেক্রেটারি জহিরুল হক, জেলা সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা শেখ আব্দুর রাজ্জাকসহ জামায়াতে ইসলামী ও এর অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

শাফিউল মিল্লাত/এআরবি