কক্সবাজার সদর উপজেলা ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্ত করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) রাতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক কক্সবাজার জেলা শাখার অধীনস্থ কক্সবাজার সদর উপজেলা ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো। শীঘ্রই উক্ত ইউনিটের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে।

এছাড়াও উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির আজ এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন। এর আগে মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়ন ছাত্রদলের ২১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির অনুমোদন দেন সদর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক এম. রাশেদুল করিম রাশেদ ও সদস্য সচিব নাজমুল হুদা সাহেদ।

ওই কমিটিতে সভাপতি নির্বাচিত করা হয় আলোচিত মোরশেদ বলি হত্যা মামলার আসামি মোহাম্মদ আব্দুল আজিজকে, যিনি এ ঘটনায় অস্ত্রসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। বিষয়টি সামনে এলে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়। নতুন কমিটির সহসভাপতি পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন রবিউল আলম ফাহিম। ২৪ ঘণ্টা না যেতেই কমিটি হারাতে হয় আজিজকে সভাপতি নির্বাচিত করা সদর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাশেদুল করিম রাশেদ ও সদস্য সচিব নাজমুল হুদা সাহেদকে।

জানা যায়, ২০২২ সালের ৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নের চেরাংঘর বাজারে স্থানীয় মাইজপাড়ার মৃত ওমর আলীর পুত্র মোরশেদ আলী (৩৮), প্রকাশ মোরশেদ বলিকে প্রকাশ্যে রাস্তায় ফেলে হাতুড়ি ও লাঠি দিয়ে বেদম পিটুনি এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

এ ঘটনায় নিহতের ভাই জাহেদ আলী বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় স্থানীয় পিএমখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা আলাল, সদ্য ঘোষিত ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুল আজিজসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।

ঘটনার কিছুদিনের মধ্যেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আজিজ মোরশেদ বলি হত্যা মামলার আরও ছয় আসামিসহ গ্রেপ্তার হলে ২০২২ সালের ২১ এপ্রিল আদালত প্রত্যেকের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন।

এছাড়াও গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে পিএমখালী এলাকায় যৌথ বাহিনী বিশেষ অভিযান চালিয়ে অস্ত্রসহ আটজনকে আটক করে। আটক ব্যক্তিদের তালিকায় ছিলেন আব্দুল আজিজ। ওই অভিযানে উদ্ধার করা হয় বিদেশি পিস্তল, ওয়ানশুট গান, এলজি, ম্যাগাজিন ও কার্তুজসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসামগ্রী।

কক্সবাজারে সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ তানু জানান, ইউনিয়ন কমিটি ঘোষণার ক্ষেত্রে সাংগঠনিক নির্দেশনা অনুসরণ করা হয়নি। তাই কেন্দ্র থেকে উপজেলা কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে পিএমখালীর বিষয়েও সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত আসতে যাচ্ছে। একই সঙ্গে আব্দুল আজিজের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফাহিমুর রহমান বলেন, কেন্দ্র থেকে কক্সবাজারের দায়িত্বপ্রাপ্ত চারজন নেতা রয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী ইউনিয়ন কমিটি অনুমোদনের বিষয়ে তাদের জানার কথা। কিন্তু পিএমখালী কমিটি নিয়ে তারা অবগত ছিলেন না বলে জেনেছি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সদর উপজেলা ছাত্রদলের সদ্য সাবেক এক যুগ্ম আহ্বায়ক বলেন, আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব মিলে স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছিলেন। পিএমখালীর কমিটি নিয়ে আমাদের কোনো মতামত নেওয়া হয়নি। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই।

অন্যদিকে পিএমখালী ছাত্রদলের এক নেতা বলেন, বিতর্কিতদের জানি না কীসের বিনিময়ে কমিটি দেওয়া হয়েছে। ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। এর পেছনের কারণ খতিয়ে দেখতে দায়িত্বশীলদের অনুরোধ করছি।

এ বিষয়ে জানতে সদ্য বিলুপ্ত ঘোষিত সদর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে সভাপতি পদ পাওয়া আব্দুল আজিজের নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

ইফতিয়াজ নুর নিশান/এআরবি