আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ৬ দিন পরেও নাটোরের বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় এখনো রাজনৈতিক দল ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন অপসারণ করা হয়নি। নির্বাচন কমিশনের স্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও এসব প্রচারণা সামগ্রী এখনো সড়ক, দেয়াল, বাজার ও গাছের গায়ে ঝুলতে দেখা গেছে।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) দিনব্যাপী নাটোরের বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকা ঘুরে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ একাধিক রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টার, ব্যানার ও স্টিকার সাঁটানো অবস্থায় দেখা যায়। অথচ তফসিল ঘোষণার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এসব পোস্টার ও ব্যানার নিজ উদ্যোগে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন।

তফসিল ঘোষণার পর বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর কয়েকজন প্রার্থী কিছু জায়গা থেকে তাদের পোস্টার ও ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করলেও অনেক এলাকায় তা বহাল রয়েছে। কোথাও কোথাও নির্দিষ্ট স্থানের পোস্টার সরানো হলেও অন্যস্থানে একই প্রার্থীর পোস্টার এখনো দেয়ালে সাঁটানো আছে।

নাটোরের চারটি সংসদীয় আসনে বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) ও শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরা কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় নিজেরাই পোস্টার অপসারণ করেন। তবে দুই-একটি স্থানে পোস্টার অপসারণের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হলেও বাস্তবে বিভিন্ন এলাকায় এখনো তাদের পোস্টার ঝুলে থাকতে দেখা গেছে।

সপ্তাহ খানেক আগে নাটোর-১ (লালপুর–বাগাতিপাড়া) আসনে নতুন করে ব্যানার-ফেস্টুন ছড়িয়ে দেন বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ফারজানা শারমিন পুতুল। তফসিল ঘোষণার পর কিছু জায়গা থেকে ব্যানার-পোস্টার অপসারণ করা হলেও পাড়া-মহল্লায় থাকা ব্যানার অপসারণে তার নেতাকর্মীদের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। 

একই আসনের ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের প্রার্থী আব্দুল্লাহিল বাকীর পোস্টার-ফেস্টুনও নির্বাচনী এলাকাজুড়ে চোখে পড়ছে। রাস্তার পাশের গাছের সঙ্গে বাঁধা ও বিভিন্ন দেয়ালে সাঁটানো এসব পোস্টার এখনো অপসারণ করা হয়নি।

এদিকে তফসিল ঘোষণার পর নাটোর-২ (সদর-নলডাঙ্গা) আসনে বিএনপির প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর নেতাকর্মীরা নাটোর শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে তার ব্যানার ও পোস্টার সরিয়ে নেন। তবে শহরের প্রধান সড়কের পাশেই এখনো তার পক্ষে ভোট প্রার্থনা করে নেতাকর্মীদের ছাপানো পোস্টার এখনো সাঁটানো আছে।

একই চিত্র দেখা গেছে সিংড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত নাটোর-৩ আসনে। এই আসনে উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন বিভিন্ন ভবনের দেয়ালে এখনো সাঁটানো রয়েছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টার।

নাটোর-৩ ( সিংড়া) আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আনোয়ারুল ইসলাম আনু বলেন, তফসিল ঘোষণার পর নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে সব পোস্টার তুলে ফেলা হয়েছে। পোস্টার থাকার কথা না। নজরে না পড়ায় দুই-একটা থাকতে পারে। কোথাও যদি থেকে থাকে চোখে পড়লে সেগুলোও তুলে ফেলা হবে।

বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত নাটোর-৪ আসনের চিত্রও একই।  শাহীবাজার, আহমেদপুর, চৌদ্দমাথাসহ বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য দলগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টার ও ব্যানার এখনো সাঁটানো রয়েছে।

ভোটাররা বলছেন, নির্ধারিত সময়ের পরও নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অমান্য করে এসব পোস্টার অপসারণ না করা প্রার্থীদের দায়িত্বহীনতার বহিঃপ্রকাশ।  

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

এর আগের দিন বুধবার (১০ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে তফসিল ঘোষণার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সাঁটানো সব ধরনের পোস্টার, দেয়াল লিখন, তোরণ ও গেইট নিজ উদ্যোগে অপসারণের নির্দেশনা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়।

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অমান্য করে নির্দিষ্ট সময়ের পরও প্রার্থীদের এসব প্রচারণা সামগ্রী সম্পর্কে জানতে নাটোরের জেলা প্রশাসক ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আসমা শাহীনের সাথে কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও এ বিষয়ে তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

আশিকুর রহমান/আরকে