ঝালকাঠিতে শোকের মাতম
হাদির খুনিদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুর খবরে তার গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটি পৌর শহরের খাসমহল এলাকায় নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া। একই সঙ্গে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে ঝালকাঠি শহরের কলেজ মোড় এলাকায় ঢাকা-ঝালকাঠি মহাসড়ক অবরোধ করে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করছেন জুলাই যোদ্ধা, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও গণ অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা।
খবরটি ছড়িয়ে পড়ার পরপরই নলছিটির খাসমহল এলাকায় হাদির বাড়িতে আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও শুভানুধ্যায়ীরা ছুটে আসেন। কান্না, আহাজারি আর স্তব্ধতায় ভারী হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। নিরাপত্তাজনিত কারণে বৃহস্পতিবার রাতে হাদির পরিবারের সদস্যরা কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ বা কথা বলেননি। পুলিশ জানিয়েছে, পরিস্থিতি বিবেচনায় পরিবারটির সঙ্গে যোগাযোগ সীমিত রাখা হয়েছে। শুক্রবার সকালে পরিবারের সদস্যরা স্বজন ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এলাকায় তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। প্রতিবেশী, সহপাঠী ও শুভানুধ্যায়ীরা দ্রুত হত্যাকারীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। হাদির স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অনেকেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন, কান্নায় ভেঙে পড়েন একাধিক সহপাঠী।
এদিকে হাদি হত্যার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১১টা থেকে ঝালকাঠি শহরের কলেজ মোড় এলাকায় ঢাকা-ঝালকাঠি মহাসড়ক অবরোধ করে ব্লকেড কর্মসূচি শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। মহাসড়কের ওপর অবস্থান নেওয়ায় দুই দিকের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে ঢাকা, বরিশাল ও খুলনাসহ বিভিন্ন রুটের বাস, ট্রাক ও পণ্যবাহী যান আটকে পড়ে। রাতের যাত্রায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী ও সাধারণ মানুষ।
বিজ্ঞাপন
অবরোধে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীরা বলেন, ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ড ছিল সম্পূর্ণ পরিকল্পিত। ঘটনার পর দীর্ঘ সময় পার হলেও হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে কার্যকর কোনো অগ্রগতি নেই। অবিলম্বে দোষীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তারা।
নেতাকর্মীদের দাবি, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও আধিপত্যবাদ টিকিয়ে রাখার জন্য এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার না করা হলে কর্মসূচি আরও বিস্তৃত করা হবে বলে জানান তারা।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ঝালকাঠি জেলার আহ্বায়ক মাইনুল ইসলাম মান্না বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর একজন সুপরিচিত বীরযোদ্ধা ও বিপ্লবী দেশপ্রেমিক হওয়া সত্ত্বেও ওসমান হাদি কেন পর্যাপ্ত নিরাপত্তা পাননি। তিনি এ হত্যাকাণ্ডকে শুধু একজন ব্যক্তির মৃত্যু নয়, বরং একটি আদর্শ ও প্রতিবাদের কণ্ঠরোধের চেষ্টা হিসেবে দেখছেন।
উল্লেখ্য, ওসমান হাদি ঝালকাঠি জেলার নলছিটি পৌর শহরের ফেরিঘাট এলাকার মরহুম শরীফ মাওলানা আব্দুল হাদির ছেলে। বর্তমানে তার বাসায় অবস্থান করছেন বোন মাছুমা সুলতানা বিন হাদী ও ভগ্নিপতি আমির হোসেন। শোকাহত পরিবারটির পাশে থাকতে আত্মীয়স্বজনেরা বাড়িতে জড়ো হচ্ছেন।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত হাদি হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে ঝালকাঠিতে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ও কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে।
শাহীন আলম/এআরবি