বগুড়ায় ফুলকপির কেজি ২ টাকা, ন্যায্য দাম না পেয়ে বিপর্যস্ত কৃষক
বগুড়া জেলার বৃহত্তম কাঁচা শাকসবজির পাইকারি বাজার মহাস্থান হাটে শীতকালীন সবজির সরবরাহ এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে। ভোর থেকেই জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার কৃষকেরা ট্রাক, পিকআপ, মোটরসাইকেল ও ভ্যানযোগে মাঠ থেকে তোলা টাটকা সবজি নিয়ে হাটে আসছেন। তবে বাজারে সবজির সরবরাহ বেশি থাকলেও কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় চরম হতাশায় পড়েছেন কৃষকেরা। বিশেষ করে ফুলকপির দাম নেমে এসেছে অবিশ্বাস্য পর্যায়ে প্রতি মণ ৮০ থেকে ১০০ টাকা যা কেজিপ্রতি মাত্র ২ টাকা।
স্থানীয়দের মতে, চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত সরবরাহ, বাইরের পাইকার বেপারির কম উপস্থিতি এবং সংরক্ষণের পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকায় কৃষকেরা বাধ্য হয়ে নামমাত্র মূল্যে সবজি বিক্রি করছেন। এতে উৎপাদন ব্যয়, শ্রমিকের মজুরি ও পরিবহন খরচ তুলতেই তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
রোববার (২১ ডিসেম্বর) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, ফুলকপি প্রতি মণ ৮০ থেকে ১০০ টাকা, যা দুই সপ্তাহ আগে ছিল ১ হাজার টাকারও বেশি এবং বর্তমানে কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২ টাকায়। মুলা প্রতি মণ ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে ১০ টাকা। বাঁধাকপি প্রতি পিস ৫ থেকে ১০ টাকা। শিম কেজি প্রতি ১৫ টাকা। করলা কেজি প্রতি ৩৫ টাকা। পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৬০ টাকা এবং পাতা পেঁয়াজ ৩০ টাকা। নতুন আলু জাতভেদে প্রতি মণ ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা, যা গত সপ্তাহের তুলনায় প্রায় অর্ধেক এবং কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে ২৫ টাকায়।
এদিকে পাকা টমেটো ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৩০ টাকা এবং পেঁয়াজের ফুলকা কেজিপ্রতি ৭ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বাজারে ব্যতিক্রম হিসেবে বেগুনের দামে কিছুটা ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। বর্তমানে বেগুন প্রতি মণ ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা কেজিপ্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা।
বিজ্ঞাপন
শিবগঞ্জ উপজেলা থেকে আসা কৃষক মো. আনোয়ার হোসেন আক্ষেপ করে বলেন, দুই সপ্তাহ আগেও যে ফুলকপি ১ হাজার ২০০ টাকা মণে বিক্রি করেছি, আজ তা ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। কেজিপ্রতি ২ টাকা দাম হলেও নেওয়ার মতো পাইকার পাওয়া যাচ্ছে না।
গাবতলীর আজাদ আলী ও সদর উপজেলার কৃষক মোজাফফর হোসেনও একই ধরনের লোকসানের কথা জানান। এদিকে মহাস্থান হাটের আড়তদার চয়ন ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী মমিনুল ইসলাম জানান, হাটে বর্তমানে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৪০টি আড়ত রয়েছে। প্রতিদিন ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে ৫০ ট্রাক সবজি পাঠানো হচ্ছে। তবে সরবরাহ অতিরিক্ত হওয়ায় প্রতিদিনই দাম কমছে।
অন্যদিকে, বগুড়া সদর ও শিবগঞ্জসহ বিভিন্ন হিমাগারে এখনো বিপুল পরিমাণ আলু মজুত রয়েছে। বাজারে আলুর ন্যায্যমূল্য না থাকায় কৃষকেরা হিমাগার থেকে আলু খালাসে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। হিমাগার কর্তৃপক্ষ একাধিকবার মাইকিং করলেও কৃষকদের আশানুরূপ সাড়া মিলছে না।
এআরবি