অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবাকে হারিয়ে চরম দারিদ্র্যের মাঝেও অদম্য সংগ্রাম চালিয়ে মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার জান্নাতুল আরফিন। ঢাকা পোস্টে তার জীবনসংগ্রামের সংবাদ প্রকাশের পর তার পাশে দাঁড়িয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে জান্নাতুল আরফিনের কাছে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক।

এর আগে গত ১৫ ডিসেম্বর ঢাকা পোস্টে ‘মেডিকেলে চান্স পেয়ে দুশ্চিন্তায় জান্নাত’ শিরোনামে জান্নাতুল আরফিনের সংগ্রামী জীবনের সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি তারেক রহমানের নজরে এলে তিনি তার পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নেন।

জান্নাতুল আরফিন নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার ডুমুরিয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কইয়াজলা গ্রামের আনসার আলী ভুঁইয়া বাড়ির মৃত আব্দুল ওয়াদুদ ও শাহিদা আক্তার দম্পতির বড় মেয়ে। তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় জান্নাত। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবাকে হারানোর পর পরিবারটির জীবনসংগ্রাম শুরু হয়।

চার সন্তানকে মানুষ করতে একাই সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন জান্নাতের মা শাহিদা আক্তার। সংসার চালাতে ও সন্তানদের পড়াশোনা অব্যাহত রাখতে তাকে বাড়িতে সেলাইয়ের কাজ, টিউশনি এবং আত্মীয়দের সহায়তার ওপর নির্ভর করতে হয়। বড় মেয়ের পড়াশোনার খরচ জোগাতে স্বামীর ভাগে পাওয়া মাত্র পাঁচ শতাংশ ধানের জমি ২০২৩ সালে তিন লাখ টাকায় বিক্রি করেন তিনি।

জানা গেছে, জান্নাতুল আরফিন নোয়াখালীর গাজীরহাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেন। আর্থিক সংকটের কারণে উচ্চমাধ্যমিকে পড়াশোনা অনিশ্চিত হয়ে পড়লেও আত্মীয়দের সহায়তায় তিনি ফেনীর জিয়া মহিলা কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকেও জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি উত্তীর্ণ হন।

এইচএসসি শেষে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে প্রথম দফায় কোচিং বাবদ প্রায় ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। প্রথমবার কাঙ্ক্ষিত ফল না পাওয়ায় হতাশ হয়ে জান্নাত বাড়ি ফিরে আসেন। পরে আবার চট্টগ্রামে কোচিংয়ে ভর্তি হয়ে আরও প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ করেন তিনি।

অবশেষে কঠোর পরিশ্রম ও অদম্য ইচ্ছাশক্তির ফল হিসেবে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষায় ৪ হাজার ৪১তম স্থান অর্জন করে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পান জান্নাতুল আরফিন। তবে ভর্তি, বইপত্র ও অন্যান্য ব্যয় নিয়ে পরিবারটি নতুন করে দুশ্চিন্তায় পড়ে।

জান্নাতের মা শাহিদা আক্তার বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর খুব কষ্টের মধ্যে দিন কেটেছে। তবুও মেয়েকে কখনো হাল ছাড়তে দিইনি। আল্লাহর রহমতে সে আজ মেডিকেলে সুযোগ পেয়েছে। আজ তারেক রহমানের প্রতিনিধি হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক আমাদের বাড়িতে এসেছেন এ জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।

নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে জান্নাতুল আরফিন বলেন, স্বপ্নের মেডিকেলে চান্স পাওয়ায় আল্লাহর দরবারে লাখো কোটি শুকরিয়া। মা একাই আমার বাবা-মা। তার ত্যাগ আমাকে বারবার লড়াই করতে শিখিয়েছে। জনাব তারেক রহমান আমার খোঁজ নিয়েছেন এ জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। ভবিষ্যতে একজন মানবিক চিকিৎসক হয়ে দরিদ্র ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই। সবার কাছে দোয়া চাই।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. ওমর ফারুক বলেন, জান্নাত অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী। আর্থিক সংকটের মধ্যেও সে নিজের চেষ্টা থামায়নি। তার সাফল্য আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। চরম প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে লড়াই করে জান্নাত আজ এখানে এসেছে। তার এই অর্জনে আমি গর্বিত। সে যেন মানুষের মতো মানুষ হয়ে মানবতার সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারে।

এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, অজপাড়া গ্রামের খবরও লন্ডনে অবস্থানরত আমাদের নেতা তারেক রহমানের কাছে পৌঁছে গেছে। তিনি আমাদের এলাকার সন্তান জান্নাতুল আরফিনের পাশে দাঁড়িয়েছেন এটি আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। বর্তমানে আচরণবিধি অনুযায়ী কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাই নির্বাচন শেষে আমরা তার সব দায়িত্ব গ্রহণ করব। আমার দুটি মেয়ে আছে আজ থেকে জান্নাত আমার আরেকটি মেয়ে। পিতৃহারা জান্নাত একদিন অনেক বড় হবে, ইনশাআল্লাহ। আমরা সবাই তার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য দোয়া করি।

এ সময় সেনবাগ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মুক্তার হোসেন পাটোয়ারী, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবদুল্লা আল মামুন, যুগ্ম আহ্বায়ক মিয়া আহ্বায়ক মিয়া মো. ইলিয়াস, সেনবাগ উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব সাহাব উদ্দিন রাসেল, পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সহিদ উল্যাহ, উপজেলা মহিলা দলের সভানেত্রী সুফিয়া আক্তার মনি, ডুমুরিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জসিম উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

হাসিব আল আমিন/এআরবি