জেমসের কনসার্টে হামলার ঘটনায় ৫ জনের মৃত্যুর গুজব
ফরিদপুর জিলা স্কুলের গৌরবময় ১৮৫ বছর পূর্তি উদযাপন ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের শেষ দিনে বহিরাগতদের ইট নিক্ষেপ ও হামলার ঘটনায় ২৫ থেকে ৩০ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় কমপক্ষে পাঁচজনকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ানো হয়েছে। তবে পুলিশ ও আয়োজক কমিটি নিশ্চিত করেছে, নিহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। আহতদের মধ্যে ১০-১২ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ৯টা থেকে পৌনে ১০টার দিকে ফরিদপুর জিলা স্কুল চত্বরে এ অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।
বিজ্ঞাপন
আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা গেছে, পুনর্মিলনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি শুধু নিবন্ধিত প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত ছিল। তবে জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী জেমসের পারফরম্যান্সের খবর শুনে কয়েক হাজার অনিবন্ধিত বহিরাগত দর্শক সেখানে জড়ো হন। তাদের ভেতরে ঢুকতে না দেওয়ায় তারা পাশের সড়কে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে বাইরে থেকে অনুষ্ঠানস্থল লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে অনুষ্ঠানটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
এই ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে গুজব ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে ওই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র ও ফরিদপুর শহরের বাসিন্দা দেব দুলাল গুহর বিরুদ্ধে। তিনি বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা।
বিজ্ঞাপন
‘Devdulal Guha Nipun’ নামের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডি এবং ‘দেব দুলাল গুহ.... দেবু ফরিদী’ নামের দুটি আইডি থেকে রাত ১২টা ও সাড়ে ১২টার দিকে এই গুজব ছড়ানো হয়। স্কুলের গেটের সামনে দুই পক্ষের উত্তেজনার একটি ভিডিও আপলোড করে তিনি ক্যাপশনে লেখেন— ‘কমপক্ষে ৫ জনকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে, শতাধিক আহত ফরিদপুর জিলা স্কুলে—জানা যাচ্ছে এমনটাই (সোর্স কমেন্টে)। স্কুলের ১৮৫ বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে উদযাপন কমিটির অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও অযোগ্যতার কারণে এসব হয়েছে। আমার কথা শুনলে আজ ফরিদপুরবাসীকে কলঙ্কময় এই দিন দেখতে হতো না।’
তবে এ বিষয়ে দেব দুলাল গুহর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত সাড়ে ৯টার দিকে দেওয়ালের ওপর দিয়ে মঞ্চের দিকে ইট ছুড়তে থাকে বহিরাগতরা। তখন মঞ্চে মডেল ও উপস্থাপিকা শ্রাবণ্য তৌহিদা এবং অন্তু করিম র্যাফেল ড্রয়ের পুরস্কার ঘোষণা করছিলেন। জেমস তখনও মঞ্চে প্রবেশ করেননি। তিনি শহরের অন্য প্রান্তে নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের রেস্ট হাউসে অবস্থান করছিলেন। বিশৃঙ্খলার কারণে রাত ৯টা ৫০ মিনিটে অনুষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেন শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য বেনজীর আহমেদ তাবরিজ।
আয়োজক কমিটির শৃঙ্খলা সদস্য বেনজীর আহমেদ তাবরিজ বলেন, বাইরে থেকে ইট ছোড়ায় পুনর্মিলনী কমিটির আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান শামীমসহ ২৫-৩০ জন আহত হন। কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং কয়েকজনের অস্ত্রোপচার লেগেছে। তবে ৫ জন মারা যাওয়ার খবরটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও গুজব।
ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, জিলা স্কুলের অনুষ্ঠানে কয়েকজন আহত হয়েছে ঠিকই, তবে কেউ মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। যারা এসব তথ্য ছড়িয়েছে তারা গুজব ছড়িয়েছে। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ করছি।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ ও ২৬ ডিসেম্বর বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে ফরিদপুর জিলা স্কুলের ১৮৫ বছর পূর্তি ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ৫ হাজার প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী অংশ নেন। অনুষ্ঠানের সমাপনী আকর্ষণ ছিল জেমসের কনসার্ট।
জহির হোসেন/এএমকে