রাসায়নিক সারমুক্ত বাঁধাকপি

ফসলের ক্ষেতে রাসায়নিক সার ও বালাইনাশক ব্যবহারের ফলে কেবল পরিবেশের ভারসাম্যই নষ্ট হচ্ছে না, ব্যাপক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতেও পড়তে হচ্ছে মানুষকে। এলোপাতাড়িভাবে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে শত্রু পোকার সঙ্গে মারা যাচ্ছে উপকারী বন্ধু পোকাও। এসব সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে সারাদেশে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আইপিএম প্রকল্পের আওতায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের মডেল প্রকল্প হিসেবে বিষমুক্ত সবজি চাষ শুরু করেছে।

এর আওতায় ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার রামপুর ইউনিয়নে এবার একশ একর জমিতে উৎপাদন হয়েছে ফুলকপি, টমেটো, লাউ, মুলাসহ নানান জাতের সবজি। রাসায়নিক সার কিংবা কিটনাশক ব্যবহার না করেই রবিশস্যে এমন আধুনিক ব্যবস্থাপনায় সফলতা পেয়েছেন ওই ইউনিয়নের ৫০০ চাষি।

তাদের একজন আবুল হাশেম। কয়েক যুগ ধরে বিভিন্ন সবজির আবাদ করে আসছেন তিনি। এতোদিন ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচতে নিয়ম করে কীটনাশক ব্যবহার করতেন তিনি। যার ফলে শ্রমের পাশাপাশি বেড়ে যেত খরচের পরিমাণও। তবে এবার উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শক্রমে ভিন্নভাবে সবজি উৎপাদনের উদ্যোগ নেন। যেখানে ব্যবহার করতে হয়নি কোনো কীটনাশক।

রাসায়নিক সারমুক্ত লাউ 

আবুল হাশেম জানান, এবার তিনি ২৬ শতাংশ জমিতে বাঁধাকপির আবাদ করেছেন। যেখানে তার ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার টাকা। এখান থেকে ৫০ হাজার টাকা লাভ করবেন বলে আশা করছেন তিনি।

একইভাবে ২০ শতাংশ জমিতে ৫ হাজার টাকা খরচে ৪ হাজার টমেটোর চারা লাগিয়েছেন আরেক চাষি ইউসুফ আলী। এখান থেকে চলতি মাসেই মণ প্রতি ১২শ টাকা দরে কমপক্ষে ৬০ মণ টমেটো বিক্রি করতে পারবেন তিনি।

ইউসুফ জানান, ক্ষেতে বিষ প্রয়োগ করলে আমাদের যেমন আর্থিক লোকসান হয় তেমনি শারীরিকভাবেও ক্ষতি হয়। তবে এবার কৃষি বিভাগ থেকে দেওয়া ফাঁদের মাধ্যমে পোকা মারা পরছে। এতে আমাদের কোনো বিষ প্রয়োগ করতে হয়নি।

উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন বলেন, সবজিক্ষেতে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব ভার্মি কম্পোস্ট এবং ক্ষতিকর পোকামাকড় দমনের জন্য রাসায়নিক কীটনাশকের পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে সেক্স ফেরোমোন ফাঁদ, হলুদ আঠালো ফাঁদ, নেট হাউজ, জৈব বালাইনাশক ইকোমেকস ও বায়োট্রিন। সেই সঙ্গে প্রত্যেক চাষিকে প্রকল্পের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে সবজির চারা উৎপাদনের জন্য বীজ, কেঁচো সার, সেক্স ফেরোমোন ফাঁদ, জৈব বালাইনাশক ও নগদ অর্থ প্রদান করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এসব ফাঁদ ও জৈব বালাইনাশক ব্যবহারের পদ্ধতির ওপর তাদের দুই ধাপে দেয়া হয়েছে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ। শেখানো হয়েছে ফাঁদ স্থাপনের কায়দা-কৌশলও।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় দেশের ১০টি উপজেলায় আইপিএম মডেল ইউনিয়ন গঠন করা হয়েছে। ময়মনসিংহ বিভাগের ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলায় মডেল ইউনিয়ন হিসেবে আমরা রামপুরকে বাছাই করেছি। এ মডেল ইউনিয়নের ২৫টি দলে ২০ জন করে চাষির সমন্বয়ে ৫০০ জন ১০০ একর জমিতে বন্ধক আকারে জৈব কৃষি ও জৈব বালাইনাশক ব্যবহারের মাধ্যমে সব ধরনের রবি মৌসুমের সবজি উৎপাদন করেছে। প্রথমে এসব পদ্ধতি ব্যবহারে দ্বিধাগ্রস্ত থাকলেও এখন ফলাফল দেখে আগ্রহী হচ্ছেন অন্যরাও।

বিষমুক্ত নিরাপদ এ সবজির ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে এখন বাজার ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শোয়েব আহমেদ বলেন, আমাদের উৎপাদিত সবজি এখন বাজারে যাচ্ছে। আমরা ইতোমধ্যে একদিন উপজেলা পরিষদে পরীক্ষামূলকভাবে একটি কর্ণার করে আলাদাভাবে বিক্রি করেছি। আমরা উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি যেন নির্দিষ্ট একটি স্থানে যেখানে কৃষকরা বসতে স্বাচ্ছন্দবোধ করে তেমন একটি জায়গা দেওয়ার জন্য তারা একটি ব্যবস্থা নিবেন। সেই সঙ্গে যারা নিরাপদ সবজি চাষ করেছেন কৃষি বিভাগ থেকে তাদের একটি করে পরিচয়পত্রও দেওয়া হবে।

এসপি