আগুনে নিঃস্ব রেললাইনের ধারে বসবাসকারী অসহায় ৪ পরিবার
জহুরা খাতুন। তিনি কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী রেলপথের কুমারখালী পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের শেরকান্দি এলাকার মৃত কিয়ামুদ্দিন শেখের স্ত্রী। তার বড় ছেলে মানিক ২০ বছর আগে এবং ছোট ছেলে রতন ৩ বছর আগে মারা গেছেন। শুক্রবার গভীর রাতে তার টিনের ঘরে আগুন লাগলে ঘরসহ ভেতরে থাকা যাবতীয় মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সেখানে তিনি তার নাতি আনোয়ার হোসেন (২৭)-এর সঙ্গে বসবাস করতেন।
বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী রেলপথ ঘেঁষে বেশ কিছু ঘনবসতি গড়ে উঠেছে। সেখানকার অন্তত চারটি ঘর এবং ঘরে থাকা সব মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পড়ে আছে দুইটি পোড়া ভ্যানের অংশ। দাঁড়িয়ে আছে শুধু ইট-সিমেন্টে তৈরি খুঁটি। সকাল পেরিয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকেল। সেখানে উৎসুক জনতা ও স্বজনদের ভিড় দেখা যায়।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, শুধু জহুরা খাতুনই নন, ওই রাতের আগুনে তার ভ্যানচালক ভাতিজা কামাল হোসেন, তার ভ্যানচালক ছেলে হৃদয় হোসেন (২২) এবং প্রতিবেশী নাজিম উদ্দিনসহ চারজনের চারটি টিনের ঘর আগুনে পুড়ে গেছে। একই সঙ্গে তাদের আয়ের একমাত্র উৎস দুইটি ব্যাটারি চালিত ভ্যান, চারটি ছাগল, ৯টি হাঁস, ৩৫টি মুরগি এবং ঘরে থাকা যাবতীয় আসবাবপত্র ও মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়ে চারটি পরিবারের অন্তত ৮ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
বৃদ্ধা জহুরা খাতুন কান্নারত অবস্থায় বলেন, দুইটা ছেলে মারা যাওয়ার পর থেকে খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। মানুষের দেওয়া সাহায্যে চলতাম। আমার যা কিছু ছিল, আগুনে সব পুড়ে গেছে। এখন আর কিছুই নেই।
বিজ্ঞাপন
এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত হৃদয় হোসেন বলেন, রাত একটার দিকে দুইটি ভ্যান ও চারটি ছাগল দেখে ঘরে গিয়ে ঘুমিয়েছিলাম। ঘণ্টাখানেক পর হঠাৎ আগুন, আগুন শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। বাইরে এসে দেখি আমাদের থাকার ঘরে আগুন জ্বলছে। তখন চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করলে স্থানীয়রা ছুটে এসে পানি ঢেলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন এবং ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়। পরে সবাই মিলে প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও আমার দুইটি ভ্যান, চারটি ছাগল, ৯টি হাঁস, ৩৫টি মুরগি এবং দুইটি ঘরসহ ঘরের সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
আরেক ক্ষতিগ্রস্ত নাজিম উদ্দিন বলেন, আগুনে পোড়া গন্ধে রাত আড়াইটার দিকে ঘুম ভেঙে যায়। দরজা খুলতেই তার ঘরের ভেতরে আগুন ঢুকে পড়ে। তখন দ্রুত এক কাপড়ে ব্যাটারি চালিত ভ্যান নিয়ে বাইরে বের হয়ে যান। মুহূর্তের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। নাজিম আরও বলেন, সরকারের সহযোগিতা না পেলে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে। আমাদের সব সহায়-সম্বল শেষ হয়ে গেছে।
কুমারখালী ফায়ার সার্ভিসের লিডার আলী হোসেন বলেন, রাত ৩টার দিকে ৯৯৯ এর মাধ্যমে খবর পাই। ৩টা ৩ মিনিটের দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। ততক্ষণে চারটি পরিবারের সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুনের সূত্রপাত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্ত শেষে জানানো যাবে।
কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা আখতার বলেন, আগুনের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে শীতবস্ত্র ও শুকনো খাবার ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হয়েছে। লিখিত আবেদন পেলে বরাদ্দ প্রাপ্তি সাপেক্ষে সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হবে।
এআরবি