বড়ালের বুকে চাষ করা হচ্ছে নানা ধরনের সবজি

খরস্রোতা বড়াল এখন নির্জলা। কালক্রমে নাব্যতা হারিয়ে এখন ফসলি ক্ষেত। পদ্মা-যমুনার সংযোগকারী এই নদীটি এক সময় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জলাভূমি চলনবিলের পানি প্রবাহের প্রধান সংযোগ ছিল।

সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮১-৮২ অর্থবছরে উৎসমুখ রাজশাহীর চারঘাটের পদ্মায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণের কারণে প্রবাহ হারিয়ে ফেলে বড়াল। তখন থেকে যৌবনা বড়ালের মরণদশা শুরু। বড়াল রাজশাহীর চারঘাট থেকে বাঘা, নাটোরের বাগাতিপাড়া, বড়াইগ্রাম, পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার মধ্যদিয়ে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী হয়ে হুড়া সাগরে মিশে নাকালিয়ায় যমুনায় গিয়ে পড়েছে।

এক সময় এই নদী ঘিরেই চলছিল সেখানকার বসবাসকারী মানুষের জীবনযাত্রা। যৌবনা বড়ালের তীরে আড়ানী বাজার, রুসত্মমপুর পশুহাট, পাকা বাজার, জামনগর বাজার, বাঁশবাড়িয়া বাজার, তমালতলা বাজার, বাগাতিপাড়া থানা, দয়ারামপুর সেনানিবাসসহ গড়ে উঠেছে বহু বসতি-লোকালয়। ভরাট হয়ে যাওয়ায় এক সময় শীর্ণ খালে পরিণত হয় বড়াল। ধীরে ধীরে চাঞ্চল্য কমে আসে বড়াল তীরের লোকালয়েও।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বড়ালের উৎসমুখ চারঘাটে রয়েছে স্লুইসগেট। এমন স্লুইসগেট রয়েছে ৪৬ কিলোমিটার ভাটিতে আটঘড়ি এলাকায়। এছাড়া বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া এলাকায় তীর দখল, ১২৫ কিলোমিটার ভাটিতে পাবনার চাটমোহর উপজেলায় ৩টি আড়াআড়ি বাঁধ নির্মাণ এবং দহপাড়ায় আরও একটি স্লুইসগেট রয়েছে বড়ালের বুকে। আর এগুলোই মরণ ডেকে এনেছে বড়ালের।

চারঘাটে বড়ালের একটি বড় অংশ চলে গেছে বৈধ দখলে। নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে অবৈধ স্থাপনা। দখলকারদের তালিকাটিও বেশ দীর্ঘ। এই তালিকায় রয়েছে খোদ চারঘাট পৌরসভা। বড়াল নদী ভরাট করে রাস্তা ও পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করেছে পৌর কর্তৃপক্ষ। নদী দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে রাস্তা-ব্রিজ। নদীর চর দখল করে ধান, গম, মশুর, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, বেগুনসহ নানা ধরনের ফসলের চাষ হচ্ছে।

বড়াল পাড়ে পুঠিমারী গ্রামের কৃষক মিনহাজ আলী বলেন, পানি না থাকায় এলাকার কৃষকরা এখন বড়ালের বুকজুড়ে ফসল আবাদ করছেন। গবাদি পশুর চারণক্ষেতের পরিণত হয়েছে বিশাল চর। অথচ এক সময় বড়ালের পানিতে আশেপাশের এলাকায় ফলতো সব ধরনের ফসল। এখন নদীতে পানি নেই। তাই বাধ্য হয়ে অগভীর নলকূপ বসিয়েছেন কৃষকরা। সেই পানিতে চলছে চাষাবাদ।

তবে পরিবেশ-প্রতিবেশ সুরক্ষায় বড়াল রক্ষার বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন বড়াল রক্ষা আন্দোলন চারঘাট উপজেলা কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বাদশা।

তিনি বলেন, পৌরসভাসহ স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রতিনিয়তই বড়াল নদী দখল করে অবৈধ স্থাপনা তৈরি করছেন। এতে হারাতে বসেছে বড়াল। দখলমুক্ত ও পুনঃখনন করে বড়ালের প্রাণ ফেরানো সময়ের দাবি।

এসপি