লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) রিয়াদ হোসেনের কার্যালয় থেকে ১৬ লাখ টাকা চুরির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় একই কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর আবদুল বাকেরসহ চার কর্মচারীকে থানায় আটকে রাখা হয়েছে। 

সোমবার (২৮ জুন) রাত সোয়া ১২টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসলেহ উদ্দিন। 

রাতে আবদুল বাকেরের স্ত্রী শারমিন আক্তার জানান, বিকেলে পিআইও নিজেই তাদের বাসায় গিয়ে টাকা খোঁজার নামে তল্লাশি চালায়। এ সময় পিআইও বাসার আসবাবপত্র তছনছ এবং ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনজন ঠিকাদারের অভিযোগ, পিআইও রিয়াদ প্রত্যেকটি কাজেই ঘুষ নেন। ঘুষ ছাড়া তিনি কোনো ফাইল বা বিলের চেকে স্বাক্ষর করেন না। সম্প্রতি কয়েকটি কাজের বিলের চেকে স্বাক্ষর করার জন্য তাদের কাছ থেকে তিনি ১ থেকে ৩ লাখ টাকা করে ঘুষ নিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, রাত সাড়ে ১২টায় পিআইও রিয়াদ ও ওসি মোসলেহ উদ্দিন আটক কর্মচারীদের থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। 

এ ছাড়া উপজেলা কার্যালয়ের কয়েকজনের ভাষ্যমতে, পিআইওর কার্যালয়ে নগদ টাকা থাকার কথা নয়। তিনি ঠিকাদারদের টাকা চেকের মাধ্যমে দেবেন। টেন্ডারের পে-অর্ডারও চেকের মাধ্যমে করা হয়। তাহলে তার কার্যালয়ে ১৬ লাখ টাকা কোথায় থেকে এলাে? আর টাকাগুলো কিসের? যার জন্য এখনো তিনি পরিষ্কারভাবে কোনো অভিযোগ করতে পারছেন না। উল্টো চার কর্মচারীকে থানায় নিয়ে হেনস্তা করা হচ্ছে।

একজন ইউপি চেয়ারম্যানসহ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, জুন ক্লোজিং উপলক্ষে পিআইও তাদের কাছ থেকে কমিশন নিয়েছেন। দুদকের মাধ্যমে সুষ্ঠু তদন্ত করলে বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্যের সব তথ্য বেরিয়ে আসবে। 

জানা গেছে, রিয়াদ হোসেন রামগতি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। কমলনগর উপজেলার শূন্যপদে তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।

থানায় আটক আবদুল বাকেরের স্ত্রী শারমিন আক্তার বলেন, আমার স্বামী কোনো দোষ করেনি। ১৬ লাখ টাকা চুরির অভিযোগে পিআইও আমার স্বামীসহ চারজনকে থানায় নিয়ে আটক করে রেখেছে। আমরা সরকারি কোয়ার্টারে থাকি। পিআইও নিজে এসে টাকা খোঁজার নামে তল্লাশি চালিয়ে আমার বাসার আসবাবপত্র তছনছ করে দিয়ে গেছে। 

পিআইও রিয়াদ হোসেনের দুইটি মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এসএমএস পাঠিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি। 

এ ব্যাপারে কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসলেহ উদ্দিন বলেন, থানায় চারজনকে ডাকা হয়েছে। তবে পিআইও এখনো কোনো নির্দিষ্ট অভিযোগ দেননি। এটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না পাওয়া পর্যন্ত আমি টাকার বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।

জানতে চাইলে কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, চারজনকে থানায় ডাকার কথা আমি শুনেছি। তবে কি কারণে বিষয়টি আমার জানা নেই।

পিআইও কার্যালয়ে নগদ টাকা থাকা নিয়ে প্রশ্নে ইউএনও বলেন, টাকার ব্যাপারে ওই চারজনকে থানায় ডাকা হয়েছে, বিষয়টি আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে পিআইওর সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব।

হাসান মাহমুদ শাকিল/এসপি