‘হামার ভাগ্য ভালো, বাঁচি থাকতে নিজের শ্যাষ ঠিকানা দেখি যাবার পাইনো। বাপ-চাচারা তো আর দেখি যাবার পায় নাই তাক কোটে মাটি দেওয়া হইবে। তারা বছর বছর ধরি গোরস্থানের চেষ্টা করছে, পায় নাই। এখন পাইনো, ভগবান সবার ভালো করুক।’ পরম আত্মতৃপ্তি নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন দলিত সম্প্রদায়ের সত্তরোর্ধ্ব নন্দ বর্মণ। তবে এই তৃপ্তির মধ্যেও ছিল যুগ যুগ ধরে বঞ্চিত হওয়ার বেদনা।

জানা গেছে, নীলফামারী সদর উপজেলার ১১ নং সোনারায় ইউনিয়নের দারোয়ানি রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ২০০ বছর ধরে রবিদাস, বাশমালী ও হরিজন সম্প্রদায়ের ৬০টি পরিবার বসবাস করে আসছে। এই পরিবারগুলোর নানা বৈষম্যের সঙ্গে সবচেয়ে প্রকট সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল কবরস্থানের।

তাদের দাফনের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় কখনো রেললাইনের ধারে, কখনো রাস্তার ধারে বা বাড়ির আঙিনায় দাফন করা হতো। সমাধির জায়গার জন্য তাদের বিড়াম্বনার শিকার হতে হয়েছে বহুবার। ২০০ বছর ধরে চলে আসছে তাদের এই লড়াই।

স্থানীয় নেতৃবৃন্দ সরকারের বেশ কয়েকটি দফতরে বহু বছর ধরে ধরনা দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। পাননি জীবনের শেষ ঠিকানার জায়গাটুকু। অবশেষে শত বছরের পুরোনো এ বঞ্চনার অবসান ঘটেছে। নীলফামারী সদর উপজেলা প্রশাসন তাদের সমাধির জন্য ১০ শতক জমি বরাদ্দ দিয়েছে। এছাড়া সমাধিস্থলের উন্নয়ন করার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১ লাখ টাকা।

নীলফামারী দারোয়ানি রবিদাস সম্প্রদায় উন্নয়ন সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছবি রানী রবিদাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের সম্প্রদায়ের কেউ মারা গেলে তাকে সমাধিস্থ করার কোনো জমি ছিল না। এই নিয়ে আমাদের ভোগান্তি আর বঞ্চনার শেষ ছিল না। এমনো হয়েছে, আমরা গর্ত করেছি কিন্তু দাফন করতে পারিনি।

তিনি আরও বলেন, এখানে ৬০-৭০টি পরিবারের প্রায় ৪০০ জন মানুষ বাস করে। আমাদের দাফনের জায়গা ছিল না। নীলফামারী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রত্না সিনহা দিদির সাহায্য আর অক্লান্ত পরিশ্রমে আমরা উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে জমি আর টাকা পেয়েছি। ইউএনও ম্যাম বিষয়টি জানামাত্র আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি স্বল্প সময়েই আমাদের জন্য যা করেছেন আমরা আজীবন তাকে স্মরণ করব।

মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী রত্না সিনহা বলেন, সোনারায় ইউনিয়নের দলিত সম্পদায়ের ওই পরিবারগুলো নানা দিক থেকেই বঞ্চনার শিকার হচ্ছিল। তাদের প্রার্থনা করার জন্য কোনো মন্দির নেই, তাদের সমাধি করার কোনো জমি নেই। আমি বিষয়টি জানতে পেরে জেলা প্রশাসক ও ইউএনও স্যারদের অবগত করি। তাদের প্রত্যক্ষ মানবিকতায় আজ দলিত সম্প্রদায়ের মানুষগুলোর মুখে হাসি ফুটল।

নীলফামারী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা (ইউএনও) এলিনা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি অমানবিক। আমি বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় তাদের জন্য জমির ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ২-১ দিনের মধ্যেই তারা সমাধির জমির উন্নয়ন করা শুরু করবে। এ ছাড়া জমির উন্নয়নে আরও এক লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এসপি