দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের প্রবেশদ্বার নামে পরিচিত রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে ফলে নদীর পানি বেড়ে গিয়েছে। সেইসঙ্গে ভাঙনের কবলে পড়েছে লঞ্চ ও ফেরিঘাটে। ইতোমধ্যে লঞ্চ ঘাট ও ১ নম্বর ফেরিঘাটের ৫০ ফুট এলাকা ভাঙনে বিলীন হয়েছে। এতে করে লঞ্চঘাটসহ ১ নম্বর ফেরিঘাট ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

শনিবার (০৩ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট থেকে ১ নম্বর ফেরিঘাট পর্যন্ত কয়েকটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ১ নম্বর ফেরিঘাটের কাছে ৫০ মিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে করে ওই এলাকার বড় ধরনের ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে মজিদ শেখ পাড়ার দেড় শতাধিক পরিবার। এছাড়াও ৭ নম্বর ফেরিঘাটের পাশে ছাত্তার মেম্বার পাড়ার অর্ধ শতাধিক পরিবারও হুমকির মুখে রয়েছে।

ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জরুরি ভিত্তিতে লঞ্চঘাট এলাকায় বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলতে দেখা যায়। কিন্তু ফেরিঘাট রক্ষায় বিআইডব্লিউটিএর কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি।

১ নম্বর ফেরিঘাটের কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে বর্ষা মৌসুম এলেই ফেরি ও লঞ্চ ঘাট ভাঙনের মুখে পড়ে। কিন্তু ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিআইডব্লিউটিএর কোনো উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ড দেখা যায় না। যখন ভাঙন দেখা দেয় তখন জরুরি ভিত্তিতে দায়সারা ভাবে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলতে দেখা যায়।

তারা আরও বলেন, আমরা অনেক দিন আগে থেকেই নদী ভাঙন ঝুঁকির বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষকে বলে আসছি। তারপর দায় এড়াতে তারা কিছু জিও ব্যাগ ফেলেছিল। কিন্তু গত ৩ দিন ধরে লঞ্চ ঘাট থেকে ১ নম্বর ফেরিঘাট পর্যন্ত ৩টি পয়েন্টে ৫০ মিটারের মতো এলাকা ধ্বসে গেলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আরেকটু পানি বেড়ে গেলে ভাঙন পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেবে। তখন ঘাটের সঙ্গে সঙ্গে এখানকার অন্তত ২শ পরিবার ভিটেমাটি হারাবে।

স্থানীয় বাসিন্দা সুরুজ মন্ডল বলেন, আমার আগে দেবগ্রাম ইউনিয়নে বাড়ি ছিল। গেল বছর ভাঙনে বাসতভিটাসহ শতাধিক বিঘা আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়। তারপর থেকেই ভিটেমাটি হারিয়ে এ লঞ্চ ঘাটের পাশে বসবাস করতে থাকি। এখন এ লঞ্চ ঘাটও যদি ভেঙে যায় তাহলে আমার যাওয়ার কোনো জায়গা নেই।

রিকশাচালক আজিজ মন্ডল বলেন, পরিবারে ৮ জন সদস্য। রিকশা চালিয়ে কোনো মতে সংসার চালােই। এখন যদি বাড়ি ভাঙতে হয় তাহলে আর যাওয়ার জায়গা নেই। খোলা আকাশের নিচে অথবা গাছতলায় আশ্রয় নিতে হবে। 

নদী ভাঙনে ভিটেমাটি হারানো দেবগ্রাম ইউনিয়নের আফছার সরদার বলেন, গত কয়েকবছর ধরে নদী ভাঙনের স্বীকার আমরা। ভাঙনে পৈতৃকভিটা, ফসলি জমিসহ গৃহপালিত পশু নদীর গর্ভে চলে গেছে। পরে লঞ্চ ঘাটের পাশে পরের জমিতে কোনো মতে ঘর করে আছি। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এবার নদী ভাঙনে লঞ্চঘাট ভেঙে গেলে মাথা গোঁজার ঠাঁই বলতে আর কিছু থাকবে না।

রাজাবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী ইকবাল সরদার ঢাকা পোস্টকে জানান, ভাঙন প্রতিরোধে লঞ্চঘাট এলাকায় ১শ মিটার এলাকায় বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। ২টি প্যাকেজে ৬ হাজার ১০টি জিও ব্যাগ নদীতে ফেলা হবে। এরই মধ্যে ৫ হাজার ৯৬টি বালু ভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে ফেলা হয়েছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) আরিচা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী নিজাম উদ্দীন পাঠান ঢাকা পোস্টকে বলেন, লঞ্চ ঘাটের পল্টুন সরানোর জন্য এখন পর্যন্ত আমরা কোনো আবেদন পাইনি। যে কারণে পল্টুন সরানোর বিষয়ে আমরা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছি না। আবেদন পেলে অবশ্যই পল্টুন সরানো হবে।

গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা মুন্সী জানান, প্রতিবছর নদী ভাঙনে কিছু বালুভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে ফেলিয়ে
দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় তাদের। যে কারণে প্রতি বছর ভাঙনের কবলে পড়তে হয়। তিনি সরকারের কাছে দাবি রেখে আরও বলেন, দৌলতদিয়া ঘাট রক্ষা করতে হলে অবশ্যই নদী ভাঙন প্রতিরোধ করতে হবে।

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুল হক খান মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ভাঙন পরিস্থিতি সরেজমিনে গিয়ে দেখেছি। ভাঙন প্রতিরোধে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যানকে অবগত করেছি। আশা করছি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মীর সামসুজ্জামান/এসএম