সংগঠনের আয়োজনে রক্তদান কর্মসূচিতে রক্ত দিচ্ছেন তারা

‘মানুষের জন্য মানুষ, মানুষের যেকোনো প্রয়োজনে মানুষ’ এই স্লোগান বাস্তবায়নে পিরোজপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কয়েকটি রক্তদাতা সংগঠন কাজ করছে বিনামূল্যে। যাদের রয়েছে নির্দিষ্ট একটি ফোন নম্বর। তাতে ফোন করলেই তারা রক্ত নিয়ে ছুটে যায় মানুষের দুঃসময়ে। যদিও তাদের নেই কোনো অফিস বা বসার জায়গা। কারণ, যেকোনো সময় দৌড়াতে হবে জেলা হাসপাতাল বা ক্লিনিকে।

সংগঠনের বেশির ভাগই বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী। তারা সামান্য কিছু আয় ও বাবার অর্জিত টাকা চেয়ে নিয়ে সংগঠনটি চালান। আবার রক্তদাতা সংগ্রহে বিভিন্ন স্থানে তারা করে থাকেন বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের কর্মসূচি। এভাবেই চলে রক্তদান কর্মসূচি। আর স্বেচ্ছাসেবকদের মাসিক চাঁদায় চলে সংগঠনের ব্যয়ভার।

বলছিলাম পিরোজপুরের অন্যতম রক্তদাতা সংগঠন রক্তের বন্ধন যুব সংগঠনের কথা। যারা কোভিড-১৯ বা লকডাউনের মাঝেও প্রতিনিয়তই চালিয়ে যাচ্ছেন রক্তদান কার্যক্রম।

সংগঠনের তথ্যমতে, ২০১৭ সালের ১৪ জুন বিশ্ব রক্তদাতা দিবসে কয়েকজন বন্ধু নিজেদের উদ্যোগে গড়ে তোলেন রক্তের বন্ধন যুব সংগঠন। ৮ থেকে ১০ ব্যাগ রক্ত দেওয়ার অনুরোধ নিয়ে মানুষের চাহিদা মেটাতে প্রতিনিয়তই চলে তাদের রক্তদান কর্মসূচি। বর্তমানে এক থেকে দেড় হাজার রক্তদাতা রয়েছেন সংগঠনে। যারা যেকোনো মুহূর্তে পিরোজপুরের যেকোনো স্থানে রক্ত দিতে প্রস্তুত।

তারা জানায়, জেলার বিভিন্ন জায়গায় দালালদের দৌড়াত্ম্য রয়েছে। তারা রক্তের বন্ধনের নাম করে রোগীদের কাছ থেকে রক্তের বিনিময়ে বিভিন্ন সময় টাকা তোলে। যে কারণে সংগঠনসহ রোগীদেরও বিভিন্ন সময় সমস্যায় পড়তে হয়।

জেলা হাসপাতালে রক্তের প্রয়োজনে ও চিকিৎসা নিতে আসা রাবেয়া বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার সন্তান হবে। আমার হিমোগ্লোবিনের মাত্রা খুবই কম। ডাক্তার কইছে অনেক রক্ত লাগবে। ওরা না থাকলে আইজ তো মইরাই যাইতাম। ওরা রক্ত দেছে বলেই আইজ আমার পোলাডা দুনিয়ার মুখ দেখল।

জেলা হাসপাতালে থ্যালাসেমিয়া রোগী মহিমা খাতুন বলেন, আমারে তো ডাক্তার কইছে রক্তশূন্যতা। তাই রক্তের বন্ধনে মোবাইল করছিলাম। তার আইসা রক্ত দিল। তারা আমাকে তিন বছর ধরে প্রতিনিয়তই রক্ত দেয়। তারা আমাকে এই পর্যন্ত প্রায় ১০ ব্যাগ রক্ত দিছে।  

সংগঠনের নিয়মিত রক্তদাতা শফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি রক্তের বন্ধন সংগঠনের মাধ্যমে নিয়মিত রক্ত দিই। এ পর্যন্ত ১১ বার রক্ত দিয়েছি। আর রক্ত দিলে কোনো সমস্যা হয় না। সব থেকে বড় কথা হচ্ছে রক্ত দিলে একটা মানুষ সুস্থ থাকে। নিজের রক্ত দিয়ে কাউকে ভালো রাখার মধ্যে অন্য রকম একটা আনন্দ ও প্রশান্তিও পাওয়া যায়।

সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নাজমুল হাসান বলেন, আমরা অনেক বছর ধরে মানুষের রক্তের প্রয়োজনেই কাজ করছি। মানুষের জন্য কাজ করতে ভালোই লাগে। তবে কাজের ক্ষেত্রে আরও উৎসাহ ও উদ্দীপনা পেলে আমরা ভালোভাবে কাজ করতে পারব।

সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি গাজী ফরহাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা প্রতিদিনই মানুষের রক্তের চাহিদা মেটাতে আপ্রাণ চেষ্টা করি। আবার রক্তের প্রয়োজন মেটার পরে তাদের খুঁজেও পাওয়া যায় না। আমরা কোনো স্বার্থের জন্য কাজ করি না। তাও আমাদের কত ধরনের কথা শুনতে হয়।

আমাদের অনেকগুলো অনুরোধ জমা আছে, যা চেষ্টা করছি। আমাদের অনেক সময় জেলার বাইরে গিয়ে রক্ত দেওয়ার অনুরোধ থাকে। সেটা আমরা দিতে পারি না। জেলা হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি হওয়া অনেক রোগীর রক্তের প্রয়োজন মেটাতেই আমরা হিমশিম খাই।

পিরোজপুর জেলা হাসপাতালের আবাসিক (আরএমও) মেডিকেল অফিসার ডা. নিজাম উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে জানান, রক্তের বন্ধন প্রতিনিয়তই হাসপাতালে মানুষের রক্তের প্রয়োজনটা বিনামূল্যে মেটাচ্ছে। এটি একটি মহতী উদ্যোগ। তারা না থাকলে হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থানে রোগীরা রক্তের অভাবে সমস্যায় পড়ত।

রক্তদানে কোনো সমস্যা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, রক্ত দিলে শরীর ভালো থাকে। চার মাস পর পর রক্ত দেওয়া ভালো। যাতে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণটা ভালো থাকে। যা রোগী ও রক্তদাতা উভয়ের জন্যই ভালো।

এনএ