আদুরি ঝরনা

পাহাড়, টিলা আর দিগন্ত জোড়া সবুজ চা বাগানের কারণে সিলেটকে বলা হয় প্রকৃতি কন্যা। সিলেটের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে প্রকৃতির অপূর্ব ভাণ্ডার। নয়নাভিরাম সিলেটের টানে দেশের নানা প্রান্ত থেকে প্রতিবছরই ছুটে আসেন লক্ষাধিক পর্যটক। প্রকৃতি কন্যা সিলেটে এবার নতুন আকর্ষণ আদুরি ঝরনা। 

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় এ ঝরনার অবস্থান। শুধু স্থানীয়রা জানতেন আদুরির কথা। কিন্তু ধীরে ধীরে প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে পৌঁছেছে পাহাড়ের বুক চিরে নেমে আসা আদুরির স্বচ্ছ জলরাশির কথা।

ওই এলাকায় এক কিলোমিটারের মধ্যে আরও দুটি ঝরনা রয়েছে। তবে পানি প্রবাহ না থাকায় ওই দুটির সৌন্দর্য সারাবছর থাকে না। বর্ষায় স্বরূপে ফেরে ঝরনা দুটি।  

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলা প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। রয়েছে প্রাকৃতিক গ্যাস, তৈল, পাথর, বালু, কয়লা ও ইউরেনিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ সব খনিজ সম্পদ। এই এলাকার ‘সিলেকশন’ বালুর কদর দেশজুড়ে। জৈন্তাপুরের লাল শাপলা বিলের পরিচিতি মুখে মুখে। এবার এসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে যোগ হয়েছে আদুরি ঝরনা।

উপজেলার জৈন্তাপুর ইউনিয়নের শ্রীপুরের খড়মপুর গ্রামে অবস্থিত ‘আদুরি ঝরনা’। তার পাশেই আরও দুটি ঝরনা রয়েছে। এগুলো হলো শ্রীপুর চা বাগান ঝরনা ও শ্রীপুর মরা ঝরনা। তবে বৃষ্টি না হলে চা বাগানের ভেতরের এই ঝরনার দেখা যায় না।

স্থানীয়রা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবর পেয়ে ঝরনার দৃশ্য দেখতে পর্যটকরা ভিড় করছেন। তবে করোনা সংক্রমণ রোধে চলমান বিধিনিষেধ ও কঠোর লকডাউনের কারণে বাইরের মানুষ যেতে পারছেন না। স্থানীয়রা ঝরনা তিনটি ঘুরে দেখছেন।

তারা জানিয়েছেন, দীর্ঘ দিন ধরেই ঝরনাগুলো আছে। লোকচক্ষুর আড়ালে থাকায় এগুলোর অবস্থান সম্পর্কে স্থানীয় গ্রামবাসী ও চা বাগান শ্রমিক ছাড়া অন্য কেউ জানতেন না। আবার যাতায়াত ব্যবস্থা ভাল না হওয়ায় অনেকেই আগ্রহ দেখায়নি। গ্রামের লোকজন কৃষিকাজে ঝরনার পানি ব্যবহার করে থাকেন।

স্থানীয়রা আরও জানান, প্রায় এক কিলোমিটারের মধ্যে তিনটি ঝরনা রয়েছে। তার মধ্যে আদুরি ঝরনায় সবসময় পানি প্রবাহ থাকে। বর্ষায় এর প্রবাহ বেড়ে যায়। স্থানীয় লোকজন আদুরি ঝরনার পানি নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করেন। অপর ঝরনা দুটির একটিতে পানি প্রবাহ কম। অন্যটিতে নেই বললেই চলে। তবে বৃষ্টি হলে পানি প্রবাহ চোখে পড়ার মতো।

প্রকৃতিপ্রেমীরা বলছেন, সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সরকার এগিয়ে আসলে সিলেটের পর্যটন শিল্পে আদুরি ঝরনা নতুন স্পট হবে। দেশজুড়ে এর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়বে। সিলেটকে পর্যটন সমৃদ্ধ করতে সরকারিভাবে ঝরনাগুলোকে সংরক্ষণেরও দাবি জানান তারা।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী জাবেদ ও বাকের জানান, আমাদের উপজেলায় এত সুন্দর ঝরনা রয়েছে তা জানা ছিল না। বন্ধুদের মাধ্যমে জানতে পারি চা-বাগান ও খড়মপুরের তিনটি ঝরনার কথা। ঝরনাগুলো দেখে আমরা মুগ্ধ।  

তারা বলেন, দুর দূরান্তে গিয়ে ঝরনা দেখলেও বাড়ির পাশে এত সুন্দর ঝরনা রয়েছে তা জানা ছিল না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝরনার ছবি দেওয়ার পর প্রতিদিন বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশীরা ঝরনার অবস্থান জানতে চায়। তারা ঘুরে এসে ঝরনাগুলো অসাধারণ বলে জানিয়েছে।

ইমরান আহমদ সরকারি মহিলা ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. খায়রুল ইসলাম জানান, ঝরনাগুলোর অবস্থান জানতে পেরে ছবি তুলতে যাই। আমার কাছে ঝরনাগুলো অসাধারণ মনে হয়েছে। ঝরনাগুলো আমাদের উপজেলার পর্যটন খাতকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।

জৈন্তাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. এখলাছুর রহমান জানান, ঝরনাগুলো সম্পর্কে আমার জানা নেই। তবে বাড়ির পাশে ঝরনা রয়েছে এটা অবশ্যই ভালো লাগার বিষয়।

জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত আজমেরী হক বলেন, জৈন্তাপুর ইউনিয়নে ঝরনা রয়েছে জানা ছিল না। আমি খোঁজ নিচ্ছি। যদি পর্যটন উপযোগী হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের মাধ্যমে ঝরনাগুলোকে পর্যটনের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করব।

তুহিন আহমদ/ওএফ